সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণ কমাতে উদ্যোগ নিন

বছরে লক্ষাধিক মৃত্যু

আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বায়ুদূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর এক লাখ দুই হাজার ৪৫৬ জনের মৃত্যু হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হৃদরোগে, ২৯ হাজার ৯২০ জন। স্ট্রোকে ২৩ হাজার ৭৫ জন, দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগে ২০ হাজার ৯৭৬, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ৯ হাজার ৭২০ জন এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে তিন হাজার ৬৩ জনের মৃত্যু হচ্ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, বায়ুদূষণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। দ্রুত বাড়ছে শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ। হাসপাতালগুলোতে অ্যাজমা, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। বাড়ছে ক্যান্সার, হৃদরোগের মতো প্রাণঘাতী রোগ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা বা দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষের। বৈশ্বিক মানদ- অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে তাকে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকলে সহনীয় বলে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। অথচ ঢাকার বায়ুমান সূচক প্রায়ই ৪০০ ছাড়িয়ে যায় এবং নাগরিকদের মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়। শুধু বছরে লক্ষাধিক মৃত্যুই নয়, তার চেয়েও অনেক বেশি মানুষ অসুস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সিআরইএর প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষণে প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে ২৬ কোটি ৩০ লাখ কর্মদিবস, যা উৎপাদনক্ষমতা কমাচ্ছে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করছে। এর আগে বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, বায়ুদূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর জিডিপির ৩.৯ থেকে ৪.৪ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়। বায়ুদূষণ রোধে অনেক কথা হলেও কাজ হয় খুবই কম। যথেচ্ছ খোঁড়াখুঁড়ি, সনাতন পদ্ধতির ইটভাটা, মানহীন ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন—কোনো কিছুরই কমতি নেই। আমরা চাই, নাগরিকদের জীবন ক্ষয়কারী বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button