সংকট কাটাতে ব্যবস্থা নিন
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক খাত
সরকারি জনতা ব্যাংকের মূলধনের ৯৮৭.৪০ শতাংশ ঋণ বেক্সিমকো গ্রুপ নিয়ে গেছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ । একইভাবে অ্যাননটেক্স ৩৩৫.৫০ শতাংশ, এস আলম ৩৩৫.১০ শতাংশ এবং ক্রিসেন্ট গ্রুপ নিয়ে গেছে ৮৯.৭০ শতাংশ ঋণ। অথচ একক গ্রাহকের ঋণ নেওয়ার সুযোগ ছিল মূলধনের মাত্র ২৫ শতাংশ। বর্তমানে জনতা ব্যাংকের ৬০ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা খেলাপির মধ্যে এই চার গ্রুপেরই খেলাপি ঋণ ৪০ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, সার্বিকভাবে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে জনতা ব্যাংকে। এছাড়া খেলাপি ঋণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণও কম নয়। বলা বাহুল্য, বিগত সরকারের মেয়াদে বিপুল অঙ্কের ঋণের বড় একটি অংশ নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে কাগুজে কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে। একটি অংশ পাচার করেছেন প্রভাবশালীরা। ধীরে ধীরে এখন তা খেলাপির খাতায় যোগ হচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকার শুধু ইসলামী ব্যাংকগুলোকেই ধ্বংস করেনি, বরং রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংককেও শেষ করে দিয়েছে। গত ১৫ বছরে ব্যাংকটিতে ব্যাপক লুটপাট করেছে বিগত সরকারের দোসররা। ফলে ব্যাংকগুলো এখন মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির হিসাব অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ এখন ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, দুর্দশাগ্রস্ত এ ঋণ ৭ লাখ কোটি টাকায় ঠেকতে পারে। এমন এক সময়ে খেলাপি ঋণের আসল চিত্র সামনে আসছে, যখন আইএমএফ খেলাপি ঋণ কমানোর শর্ত দিয়েছে। সংস্থাটি ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকের ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামানোর শর্ত দিয়েছে। এ অবস্থায় খেলাপি হওয়া ঋণের অর্থ যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধারে তৎপরতা চালানো উচিত। দেশের ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা হচ্ছে বিপুল অঙ্কের এসব খেলাপি ঋণ। বস্তুত দীর্ঘদিন ধরে চলমান এ সমস্যা পুঞ্জীভূত হয়ে বর্তমান আকার ধারণ করেছে। গেল সাড়ে ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোয় খেলাপি ঋণ বেপরোয়া গতিতে বেড়েছে। বড় বড় জাল-জালিয়াতির ঘটনাও ঘটেছে। জালিয়াতির মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের প্রায় সবই খেলাপি হয়ে গেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি যারা এসব অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বস্তুত সুশাসনের অভাবে ব্যাংক খাতের রোগ এতটা জটিল আকার ধারণ করেছে। কাজেই জরুরি ভিত্তিতে এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। ইতোমধ্যে ব্যাংক খাত সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্স যেসব সুপারিশ করবে, তা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।