কোচিং বাণিজ্যে দিশেহারা অভিভাবকরা
দেশে চলছে কোচিং বাণিজ্যের রমরমা ব্যবসা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। ছাত্রত্ব রক্ষার জন্য অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে নামমাত্র ভর্তি হয়ে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এসব কোচিং সেন্টারে ঝুঁকে পড়েছে। চটকদার বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আকৃষ্ট করে শিক্ষার পরিবেশ ও মানহীন এসব কোচিং সেন্টারগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। কোচিংয়ের নামে ক্লাস না করে শিক্ষার্থীদের টাকার বিনিময়ে কোচিং করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমপিও-ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান সব ক্ষেত্রে এই বাণিজ্য এখন চোখে পড়ার মতো। ছাত্ররা অভিভাবককে কোচিং বাণিজ্যের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের চাপ সৃষ্টি করে কোচিংয়ের জন্য। নতুন করে দেশব্যাপী প্রাইভেট ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্যের ব্যবসা শুরু হতে দেখছি। এক এক জন শিক্ষার্থী থেকে চার হাজার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত কোচিং ফি নির্ধারণ করছে। নি¤œ ও মধ্যম আয়ের পরিবার গুলো এই চাপ সহ্য করতে পারছে না। সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে কোচিং সেন্টারে পড়ানোর প্রতি অধিক মনোযোগী হয়ে পড়েছেন শিক্ষকরা এমন অভিযোগ ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের। এতে শিক্ষকরা কোচিংমুখী হওয়ায় বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের পড়া অনেকটা নিষ্প্রভ বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতা না থাকায় শিক্ষকরাও অবাধে কোচিং ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে চালানো হচ্ছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। শহরের নামি-দামি স্কুল-কলেজের আশপাশে এমনই বহু কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। স্থানীয় নামি-দামি বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ শিক্ষকরা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এসব কোচিং সেন্টারে পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। প্রতিটি কোচিং সেন্টারে ব্যাচ প্রতি ২৫-৩০ জন করে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে বলে জানা যায়। এখন নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। সরকার অনেক কিছু সংস্কারে হাত দিয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংস্কার কর্মসূচি চলছে। শিক্ষা ব্যবস্থায়ও সংস্কার শুরু হয়েছে। তবে তৃণমূল পর্যায়ে সেই সংস্কার কার্যক্রমে সুফল অভিভাবক শিক্ষার্থীরা দেখছেন না। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একাধিক লেখা প্রবন্ধ নিবন্ধ জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লেখাপড়ার গুণগতমান ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের এসব বিষয়ে এখনও কোনো পরিবর্তন হয়নি, হচ্ছেও না। কোচিং বাণিজ্য ও গাইড বুক বাণিজ্যের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাসনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি ২০২৫-কে টার্গেট করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্য ও ভর্তি বাণিজ্য কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ চায় সকলে।