স্থানীয় সংবাদ

খুলনা শিশু হাসপাতালে তিল ধারণের ঠাঁই নেই

শিশু রোগীর চাপ বাড়ছেই

# আবহাওয়া পরিবর্তনে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা, শিশু হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে শয্যা সংকট #
# গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৩৮ জন, সুস্থ হয়ে ফিরে গেছে ৪০ জন শিশু #
# এ সময়ে শিশুর সুস্থতায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহন এবং পরামর্শ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের #

মোঃ আশিকুর রহমান : সম্প্রতি আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত (গরম হতে ঠান্ডা, ঠান্ডাপ হতে গরম) কারণে শিশুদের জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রবণতা বেড়েছে। প্রতিদিনই খুলনার আশপাশের জেলা শহর থেকে বিশেষ করে, খুলনার স্থানীয় অঞ্চল, বাগেরহাট, মংলা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, নড়াইল কালিয়া, গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, যশোরসহ আশপাশের অঞ্চল হতে রোগাক্রান্ত শিশুকে নিয়ে খুলনা শিশু হাসপাতালসহ খুলনার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে হাজির হচ্ছেন রোগাক্রান্ত শিশুর স্বজনেরা। আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে শিশু রোগীর সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, খুলনা শিশু হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। একই সাথে প্রতিদিনই হাসপাতালটির বর্হিবিভাগেও রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকগণ। এ সময় রোগাক্রান্ত শিশুদের বাড়তি যতœ নেওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাদ্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি খেয়াল রাখাসহ সঠিক ওষুধ প্রয়োগসহ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে চলার পরামর্শ দিয়েছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা।

খুলনা শিশু হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে,শিশু হাসপাতালের আন্তঃ বিভাগের শয্যা রয়েছে ২৬১টি। গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৩৮ জন। সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৪০ জন রোগী বলে নিশ্চিত করেছেন আন্তঃ বিভাগের কর্তব্যরত সেবিকা নাসরিন আক্তার। অপরদিকে, জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় বহির্বিভাগে ৫৩৭ জন শিশু রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে শিশু রোগীরা ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রবণতা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন বলে জানিয়েছেন সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে অনেক রোগাক্রান্ত শিশুরা অভিভাবকগণ শিশুর জ্বর, সর্দি বা কাশি নিয়ে এলে বর্হিবিভাগ হতে চিকিৎসা সেবা গ্রহন করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেক শিশু শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। বর্তমানে শিশু হাসপাতালে শিশুর রোগীর বাড়তি চাপের কারণে হাসপাতালটির বর্হিবিভাগ ও আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকগণ। শুধুমাত্র খুলনা শিশু হাসপাতাল নয়, বরং নগরীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও শিশু বিশেষজ্ঞদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীর চাপ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে খুলনা শিশু হাসপাতালে গিয়ে ঘুরে দেখা গেছে, খুলনার স্থানীয় অঞ্চল হতে বর্হিবিভাগে সর্দি, কাশি, জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছেন একাধিক েেরাগাক্রান্ত শিশুর অভিভাবকগণ। একই সাথে আন্তঃবিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, খুলনাসহ আশপাশের জেলা শহর হতে আসা একাধিক শিশুরোগীরা জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন। কথা হয় ঝিনাইদহের মহেশপুর হতে আসা খুলনা শিশু হাসপাতালের আন্তঃ বিভাগে ভর্তি হওয়া শিশু রোগীর অভিভাবক শান্তার সাথে। তিনি জানান, বাচ্চা কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিল। অবশেষে বাচ্চাকে খুলনা শিশু হাসপাতালে নিয়ে এলে ডাক্তাররা তাকে ভর্তি করতে বলেন। তারা বলেছেন, বাচ্চার জন্ডিস হয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহন করলে বাচ্চা সুস্থ হয়ে যাবে। এখন আগের থেকে বাচ্চার অবস্থা ভালো। হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই ভালো। কথা হয় বাগেরহাট মোড়লগঞ্জ থেকে আসা খুলনা শিশু হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে ভর্তি হওয়া শিশু রোগীর অভিভাবক শাফিকার সাথে। তিনি জানান, আমার বাচ্চার বয়স ২ মাস। ৫দিন হলো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। বাচ্চার জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ডাক্তাররা বলেছেন, বাচ্চার নিউমোনিয়া হয়েছে। চিকিৎসা চলছে, এখন বাচ্চা অনেক সুস্থ আছে। হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবার মান অনেক ভালো।
কথা হয় খুলনার শিরোমনি এলাকা হতে আসা খুলনা শিশু হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে ভর্তি হওয়া শিশু রোগীর অভিভাবক ফাতেমার সাথে। তিনি জানান, আমার বাচ্চার বয়স ৫ মাস। বাচ্চার জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। বাসায় বাচ্চা কয়েকদিন ধরে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগেছে। জ্বর না কমার কারণে শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে আসার পর ডাক্তাররা বলেছেন, বাচ্চার নিউমোনিয়া হয়েছে। এরপর বাচ্চাকে আন্তঃবিভাগে ভর্তি করি। বাচ্চার যথারীতি চিকিৎসা চলছে, এখন বাচ্চা অনেক সুস্থ আছে। হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা খুব আন্তরিক, স্বাস্থ্য সেবার মানও অনেক ভালো মানের। খুলনা শিশু হাসপাতালের (আর.এম.ও) ডা. মো.মাজহারুল ইসলাম জানান, প্রতি বছরই আবহাওয়া বা মৌসুম পরিবর্তনের কারণে শিশুদের মধ্যে জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। বর্তমানে শিশু হাসপাতালের বর্হিবিভাগ ও আন্তঃ বিভাগে রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে।
রোগাক্রান্ত শিশুকে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে কোনও সমস্যা হয় না। এ সময় আক্রান্ত শিশুদের বাড়তি যতœ নেওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাদ্য, বাইরের খাবার না খাওয়ানোসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি অভিভাবকদের অধিক যতœবান হতে হবে। একই সাথে সঠিক ওষুধ প্রয়োগসহ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে চলতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button