স্থানীয় সংবাদ

অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছেন খুলনার শিক্ষার্থীরা

# ‘বিনা লাভের দোকানে’ অপ্রত্যাশিত লাভ, যাবে ছাদবাগান প্রকল্পে #

স্টাফ রিপোর্টারঃ খুলনায় ‘বিনা লাভের দোকান’-এ দুই দিনের কার্যক্রমে অপ্রত্যাশিতভাবে লাভের মুখ দেখলো। পাঁচটি পয়েন্ট থেকে ২ দিনে ১৫০০ টাকা লাভ হয়েছে। তারচেয়েও বড় বিষয়, বাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। ৪০০ টাকার কাঁচা মরিচ এখন ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে নেমেছে। আলু-পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত আছে। সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে কাঁচা মরিচ বাদে কোনও সবজির দামই ক্রেতার নাগালে এখনও আসেনি।
বিনা লাভের দোকান ২৭ ও ২৮ অক্টোবর খুলনার ৫টি পয়েন্টে চলমান থাকে। ৬টি পয়েন্টে এ দোকান হওয়ার ঘোষণা থাকলেও একটি পয়েন্ট (খালিশপুর চিত্রালী বাজার) বন্ধ রাখা হয়। আর শিববাড়ি মোড়ের পয়েন্ট ২৮ অক্টোবর ময়লাপোতা মোড়ে পরিচালিত হয়। কারণ, কৃষি বিপণন বিভাগ থেকে ২৮ অক্টোবর শিববাড়ি মোড়ে কৃষিপণ্যের ওএমএস চালু হয়। এই ওএমএস খুলনার ৫টি পয়েন্টে পরিচালিত হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের সদস্য হৃদয় ঘরামী বলেন, ‘আমরা বিনা লাভের দোকান চালু করে পাইকারি দরে পণ্য কিনে ওই দামেই বিক্রি করি। ওজনের পার্থক্যের কারণে খুচরা পয়সা দামে আসলে (২৫ টাকা ২৫ পয়সা) ওটাকে পূর্ণ টাকা ধরে (২৬ টাকা) সেল করি। এতে ৭৫ পয়সা লাভ আসে। এভাবে ৫টি পয়েন্ট থেকে ২ দিনে ১৫০০ টাকা লাভ আসে। এতে প্রতিটি পয়েন্ট থেকে ১৫০ টাকা লাভ হয়।‘ তিনি বলেন, ‘এই লাভের টাকা আমরা ছাদবাগান প্রকল্পে দেবো। এই টাকা দিয়েই ১ নভেম্বর থেকে খুলনায় ছাদবাগান গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু করবো। খুলনা শহর ও জেলার প্রতিটি ছাদকেই আমরা বাগানে রূপ দেবো। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এদের মাধ্যমে খুলনার প্রতিটি ছাদকে বাগানে পরিণত করা হবে। যে সকল ছাদ বা বাড়ির মালিক নিজেরাই অর্থ ব্যয় করবেন সেখানে আমরা সাপোর্ট দেবো, পরিশ্রম দিয়ে ছাদটিকে সাজিয়ে দেবো। আর যেসব মালিকরা খরচ করতে চাইবেন না সেখানে আমরাই প্রয়োজনীয় অর্থ ও উপকরণ দিয়ে ছাদকে বাগান বানিয়ে দেবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘২৭ অক্টোবর বয়রা বাজারে ৪০০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছিল। আমরা বিনা লাভের দোকান চালু করার পরই সেখানে কাঁচা মরিচ ২০০ টাকায় নেমে আসে। আমরা ১৫০ টাকা বিক্রি করছিলাম। ২৮ অক্টোবর খুলনায় ১২০-১৬০ টাকা দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়। বিনা লাভের দোকানের মাধ্যমে এটা একটা সুফল।’ উল্লেখ্য, বিনা লাভের দোকানে আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৭৫ টাক, দেশি রসুন ২১৫ টাকা, মসুর সাল ডাল ১০০-১০৫ টাকা, লাউ ৪০ টাকা (পিস), লালশাক ২৫-৩০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৫০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার সমন্বয়ক মুহিবুল্লাহ মুহিব বলেন, ‘বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। বিনা লাভের দোকান চালুর ২ দিনের মাথায়ই আমরা পণ্যমূল্য কম দেখতে পারছি। যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফলতা। পণ্যমূল্য সাধারণের ক্রয়সীমার মধ্যে না আসা পর্যন্ত বিনা লাভের দোকান চালু থাকবে।’ খুলনা নাগরিক সমাজের নেতা অ্যাড. বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘বিনা লাভের দোকানে যদি পাইকারি দরেই পণ্য বিক্রি করে অপ্রত্যাশিতভাবে লাভ হয়, তাহলে বাজারের ব্যবসায়ীরা পাইকারি ও খুচরা দামে কতটা লাভ করতে পারবে বা লাভ করা উচিত সে বিষয়ে নির্দেশনাসহ কঠোর মনিটরিং থাকা দরকার। ছাত্ররা যদি ২৫-৩০ টাকায় লালশাক, দেড়শ টাকায় কাঁচা মরিচ, ৪০ টাকায় পটল বেচে লাভ করে, তাহলে খুচরা বিক্রেতারা ৬০-৭০ টাকা লালশাক, পটল, ৪০০ টাকায় কাঁচা মরিচ বিক্রি করে কত পরিমাণ লাভ করছে। তা সফলভাবে মনিটরিং করা গেলেই বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হতে পারে।’ খুলনা কৃষি বিপণন বিভাগের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (ইনচার্জ) আব্দুস সালাম তরফদার বলেন, ‘বাজার মনিটরিংয়ে টাস্কফোর্স কমিটি সচেতনতার সঙ্গে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’ খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স দায়িত্ব পালন করছে। কঠোরভাবে সবকিছু মনিটরিং করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button