ময়ুর নদ খনন কার্যক্রম পরিদর্শনে নাগরিক নেতৃবৃন্দ
# খুলনার প্রাণ ময়ুর নদ বাঁচাতে দখল দুষণ বন্ধের বিকল্প নেই #
স্টাফ রিপোর্টারঃ খুলনা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ময়ুর নদের চলমান খনন কার্যক্রম পরিদর্শনে যান খুলনার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ । পরিদর্শন পূর্বে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান স্থানীয় একটি হোটেলে ময়ুর নদী খনন কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন। পরিদর্শনকালে নাগরিক নেতারা বলেন, ময়ুর নদে পানি প্রবাহ শুরু হয়েছে। এটা ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি ময়ুর নদের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও দুষণ বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মঙ্গলবার সকালে খুলনার প্রাণ ময়ুর নদ পরিদর্শনকালে অর্ধশতাধিক অবৈধ দখলদারের চিত্র প্রকাশ্যে দেখা যায়। কোন দখলদার বাঁশ দিয়ে দখলদারিত্ব ধরে রেখেছেন। কোন দখলদার স্থায়ীভাবে পাকা ভবন নির্মাণ করছেন। কেউ বাঁশ দিয়ে ঘর তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে। এই দখল ঠেকাতে না পারলে ময়ুর নদ খননের আসল উদ্দেশ্য সফল হবে না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মোঃ মশিউজ্জামান, তত্বাবধাক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আঃ আজিজ, প্রকল্প প্রধান শেখ মাসুদ করিম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আনিছুর রহমান, কেসিসির রাজস্ব অফিসার এসকেএম তাছাদুজ্জামান, প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান মিঠু, মিজানুর রহমান, পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ খুলনার সম্পাদক সুতপা বেদজ্ঞ, বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল, বাপার সমন্বয়কারী এড. বাবুল হাওলাদার, বেলার সদস্য খলিলুর রহমান সুমন, শরিফুল ইসলাম সেলিম, মাহবুবুর রহমান খোকন, ডাঃ নাসির উদ্দীন, সরদার আবু তাহের প্রমূখ। এ সময় বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, ময়ুর নদ বাঁচাতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় করতে হবে। সিএসএসসহ যেসব প্রতিষ্ঠান নদীর পাড় দখল করে আছে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ময়ুর নদ খননের সুফল পাওয়া যাবে না। পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের সম্পাদক সুতপা বেদজ্ঞ বলেন, কেসিসি দাবি করেছে ময়ুর নদ খনন কাজ ৮২ ভাগ শেষ হয়েছে। তবে নদীতে জোয়ার ভাটা তেমন দেখা যাচ্ছে না। এই নদী নিয়মিত নৌকা চলাচল খুবই জরুরী। তাহলে দকলদাররা সহজেই নদী দখল করতে পারবে না। এ নদীকে বাঁচাতে পারলে খুলনায় মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হবে। কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপান কর্মকর্তা মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, ময়ুর নদী বাঁচানোর জন্য দুষণমুক্ত করার জন্য কেসিসি চেস্টা করছে এ চলামান কাজ অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। বাপার সমন্বয়কারী এড. বাবুল হাওলাদার বলেন, চলমান প্রকল্প তেমন ফলপ্রসু হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। মাত্র কয়েক মাস আগে ময়ুর নদে যে পরিবশে ছিল তা বেশ উন্নত হয়েছে। ১০ গেট উন্মুক্ত করণ ও বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা দুর করা গেলে ময়ুর নদ অনেক কাজে আসবে। ময়ুর নদের পানি রির্জাভ করা যেতে পারে। সংকটকালিন সময় এ পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। ময়ুর নদে মাছ এসেছে তা ভাল খবর। সবাই পরিকল্পিতভাবে সকল দপ্তরের সমন্বয়ে এই নদীকে বাচাতে চেষ্টা করলে নদী খনন স্বার্থক হবে বলে তিনি মনে করেন। বৃহত্তর খুলনাবাসী সংগঠনের সাঃ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান খোকন বলেন, খুলনার প্রাণ ময়ুর নদকে বাঁচাতে আমরা বিগত দিনে আন্দোলন করেছি। আমাদের দাবি ছিল ৭কোটি ৫৯ লাখ টাকা দিয়ে কেসিসি প্রকল্প গ্রহণ করে। কথা ছিল দু’ সাইডে সীমানা নির্ধারণ। কিন্তু ইতোমধ্যে সীমানা অপসারণ করা হয়েছে। এসব দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। বর্ষার মধ্যে কাজ বন্ধ করার কথা বলেছি। রূপসা ১০ গেট দিয়ে জোয়ার ভাটা না হলে আমারো নদ কচুরিপানায় ভরে যাবে। একই সাথে নদীর পাড়ে সচেতনামূলক বিল বোর্ড স্থাপন করতে হবে। যাতে নদী না দখল করে আর ময়লা না পেলে সে জন্য কেসিসির পক্ষ থেকে নিয়মিত তদারকি থাকা জরুরী। দৈনিক কালেরকন্ঠ খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচএম আলাদ্দীন বলেন, ময়ুর নদ খুলনার জন্য আর্শিবাদ স্বরূপ। তার জন্য ময়ুর নদ সঠিকভাবে খনন করতে হবে। দখলদার মুক্ত করতে হবে। বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। নদীর পানি প্রবাহ ধরে রাখতে হবে। তবেই ময়ুর নদ অভিশাপ না হয়ে খুলনার জন্য আর্শিবাদ হয়ে দেখা দেবে। রায়েরমহল থেকে আলুতলা ১০ গেট পর্যন্ত খননের আওতায় এনে জোয়ার ভাটা ব্যবস্থা করা হয় তাহলেই ময়ুর নদ খনন স্বার্থক হবে। একই সাথে নদীর পাশে হাটার রাস্তা করা হয় তবে ময়ুর নদ হবে বিনোদন কেন্দ্র। কেসিসি সূত্রে জানা যায়, ময়ুর নদ ৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে খনন কাজ চলমান। ইতোমেধ্য ৮২ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে আবারো আবেদন করা হয়েছে। আগামী তিন মাস নাগাদ ময়ুর নদ সম্পূর্ন খনন কাজ সম্পন্ন হবে। ২০২২ সালের জুন মাসে এ প্রকল্পের কার্যাদেশ দেয়া হয়। বর্ষার কারণে আট মাস কাজ বন্ধ ছিল। যার জন্য নির্ধারিত সময়ে খনন কাজ সম্পন্ন হয়নি। ময়ুর নদের দৈর্ঘ্য ৫.৯১ কিলোমিটার, প্রস্থ ২০-৪৩ মিটার, গভীরতা ১.৯ মিটার।