গণতন্ত্রবিরোধীদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই : সতর্ক থাকুন
# বিএনপির শোভাযাত্রায় তারেক রহমান #
# জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যপক শো-ডাউন #
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে শোভাযাত্রা করেছে বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হওয়া বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর সমাগম ঘটে। এর আগে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান এবং নিজেও সতর্ক থাকবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই। অন্তর্র্বতী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা দেশে-বিদেশে ও প্রশাসনে এখনও সক্রিয়। কিন্তু এই সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।’ বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর বিকাল ৩টা ৮ মিনিটে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। কাকরাইল মোড়, কাকরাইল মসজিদ, মৎস্যভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন, শাহবাগ, হোটেল শেরাটন, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট সড়ক হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে সন্ধ্যা ৭টা ৭ মিনিটে শোভাযাত্রা শেষ হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, গাজীপুর জেলা ও মহানগর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল এবং মানিকগঞ্জ জেলার বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন। যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দল ও স্বেচ্ছাসেবক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, মহিলা দল, জাসাস, ওলাম দল, তাঁতী দল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দল, ড্যাবসহ পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এতে অংশ নেন। শোভাযাত্রায় সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো।
বিএনপির নেতারা বলেন, এই শোভাযাত্রায় সবার অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজধানীতে এত মানুষের উপস্থিতিতে কোনো রাজনৈতিক দলের শোভাযাত্রা অতীতে দেখা যায়নি। শোভাযাত্রার প্রথম ভাগ যখন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে পৌঁছায় তখনও শেষ ভাগে থাকা নেতাকর্মীরা মতিঝিলের আগ পর্যন্ত ছিল। এর বাইরে অলিগতিতেও নেতাকর্মীদের পদচারণায় ছিল পরিপূর্ণ। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করে তারেক রহমান বলেন, ‘একটি বিষয়ে স্মরণ করিয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানাতে চাই, আমি নিজেও সতর্ক থাকতে চাই। সেটি হলো গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনও কিন্তু থেমে নেই। অন্তর্র্বতী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা দেশে-বিদেশে, প্রশাসনে এখনও সক্রিয়। এই সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আর অন্তর্র্বতী সরকারও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে- এটিই আজ জনগণের চাওয়া। বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আর কেউ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারবে না।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আর কখনো যেন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে সে জন্য প্রতিটি নাগরিকের ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য স্থানীয় সরকার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জনগণের ভোটের প্রতি যতক্ষণ পর্যন্ত মুখাপেক্ষী করা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণ গণতন্ত্রের সুফল পাবে না। এমনকি স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশেও স্বল্প আয়ের মানুষকে বাজার সিন্ডিকেটের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’ তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি জেনে রাখুক রাজধানীর রাজপথের এই সমাবেশ-মিছিল কারও বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলার জন্য নয়, বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষার মিছিল; দেশের ও নিজের অধিকার রক্ষার মিছিল। রাজপথে লাখো জনতার এই মিছিল বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে ৭ই নভেম্বরের অন্তর্নিহিত শিক্ষায় দীক্ষিত করার মিছিল, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আহত অসংখ্য ছাত্র-জনতা এবং হাজারও শহীদের স্বপ্নে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের মিছিল। লক্ষ জনতার এই মিছিলকে বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। এর আগে সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে কোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করতে আসবে, অত্যন্ত সজাগ ও সচেতন থেকে তাদের যে কোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করব। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিগত ১৭ বছরে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ দেশের সব রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। তারা দেশকে করেছিল একটি মাফিয়া রাষ্ট্র। তারা দেশের অর্থনীতি ব্যবস্থা ফোকলা করে দিয়েছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা, গুম করেছে। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এই শোভাযাত্রা প্রমাণ করে বাংলাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল বিএনপি। এদিকে শোভাযাত্রা উপলক্ষে গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সড়কের একদিকে ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল, কাকরাইল থেকে শান্তিনগর মোড়, পুরানা পল্টন পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মীর পদচারণায় জনসমুদ্রে রূপ নেয়। তাদের গায়ে ও মাথায় ছিল নানা রঙের টি-শার্ট ক্যাপ ও হাতে ধানের শীষের ছড়া বিএনপির দলীয় পতাকা এবং জাতীয় পতাকা। ছিল জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিসংবলিত বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড। শোভাযাত্রায় বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে জাসাস শিল্পীদের দেশাত্মবোধক গান, বাউলদের বাউল গান, নেতাকর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে শোভাযাত্রা মানিক মিয়া পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়। এ সময় রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার মানুষ করতালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানায়। বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য একটি খোলা ট্রাকে মিছিলে অংশ নেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে শোভাযাত্রার প্রথম ভাগ যখন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে পৌঁছায় তখনও শেষভাগে থাকা নেতাকর্মীরা ফকিরাপুলে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তবে এই শোভাযাত্রার কারণে সড়কে ব্যাপক যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের। শোভাযাত্রায় আরও অংশ নেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাজাহান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নাসির উদ্দিন অসীম, শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, মীর নেওয়াজ আলী, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ডা. রফিকুল ইসলাম, রকিবুল ইসলাম বকুল, সাইফুল আলম নিরব, নিলোফার চৌধুরী মনি, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনীর হোসেন, ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, তমিজ উদ্দিন, ঢাকা মহানগরের রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, মোস্তফা জামান, তানভীর আহমেদ রবিন, মাহবুবুল হক নান্নু, কাজী রওনকুল ইসলাম টিপু, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আব্দুল মোনায়েম মুন্না, নরুল ইসলাম নয়ন, এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, হাসান জাফির তুহিন, মোশাররফ হোসেন, রাকিকুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দিন নাছিরসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এ ছাড়াও ঢাকা বিভাগীয় জেলার শীর্ষ নেতারাও ছিলেন।