শিক্ষাব্যবস্থায় জেঁকে বসেছে দুর্নীতি
শিক্ষকতা হলো একটি ব্রত এবং সেবামূলক পেশা। এই পেশায় সততা ও নৈতিকতা অতিমাত্রায় জড়িত। তবে বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থায়ও জেঁকে বসেছে দুর্নীতি। নৈতিকতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সততা, মহত্ত্ব, ন্যায়পরায়ণতা, আদর্শবাদিতা। লোভ-লালসা, উচ্চাভিলাষ ও বিবেচনাহীন জৈবিক কামনা মানুষকে অসৎ পথে পরিচালিত করে। ফলে সমাজ ও দেশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। আমরা দেশের বড় বড় শহরের দিকে তাকালেই দেখতে পাই সুবিশাল অট্টালিকা। মনে হয় যেন দেশ এগোচ্ছে হুহু করে; তবে সামাজিক মূল্যবোধ যে অবক্ষয়ের দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে তা যদিও চোখে দেখা যায় না, অনুভব করা যায়। সবার আশা ছিল, অন্ততপক্ষে শিক্ষাব্যবস্থা দুর্নীতিমুক্ত থাকবে। কোনো ধরনের অনৈতিকতা এখানে স্পর্শ করতে পারবে না যেহেতু শিক্ষাকরা সর্বদা তাদের শিক্ষার্থীদের উচ্চ নৈতিকতা ধারণ ও চর্চার বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। কিন্তু সাধারণের এ চাওয়া পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে দেশের শিক্ষকসমাজ। এখানেও জেঁকে বসেছে দুর্নীতি। শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি; বিশেষ করে বেসরকারি স্কুল কলেজে। যেসব অপরাধের কথা চিন্তা করা যেত না, এখন সে ধরনের অপরাধ সমাজে সংঘটিত হচ্ছে দেদারসে। অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ যতটুকু এগিয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা, দুর্নীতি দমন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি হয়নি। বরং সামাজিক সুরক্ষা ও সুশাসনের চরম অবনতি ঘটেছে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে দুর্নীতি। ফলে অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা প্রবর্তনে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিয়ম-দুর্নীতি অনেকটা কমে এলেও, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো উন্নয়নে বিগত কয়েক দশকে বিপুল অর্থ বরাদ্দ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থার সব স্তরে দুর্নীতি গেড়ে বসেছে। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগের করুণ অবস্থার কারণে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান এই হাল বলে মনে করি। যারা পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি শিশুশিক্ষার্থীদের শেখাতেন নীতি-নৈতিকতার পাঠ, তাদের কেউ কেউ জড়িয়েছেন চরম অনৈতিকতায়। এমন বাস্তবতায় জাতির সবার কল্যাণে শিক্ষকসমাজের আগের সম্মান ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যৎ সময়ের সর্বনাশা দিনের অপেক্ষায় থাকতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা ব্যতীত দেশে উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। তাই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষার দায়দায়িত্ব সরকার বা রাষ্ট্রের পাশাপাশি শিক্ষক সমাজকেউ গ্রহণ করতে হবে। পৃথিবীতে যত গুলো পেশা আছে, শিক্ষকতা হলো তার মধ্যে চিন্তাশীল, সৃজনশীল ওসম্মানজনক পেশা।