সম্পাদকীয়

সড়কে ফিটনেসহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে

সড়কে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনায় প্রতিদিন ঝরছে বহু মূল্যবান প্রাণ। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ফিটনেসবিহীন গাড়ি। নানা ধরনের বিধিনিষেধ সত্ত্বেও এসব গাড়ি চলাচল রোধ করা সম্ভব হয়নি। বরং সব ধরনের নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে এসব ফিটনেসহীন গাড়ি দেশের সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হওয়ার অন্যতম কারণ এই ফিটনেসবিহীন যানবাহন। উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতির অন্যতম প্রধান শর্ত, সেখানে অবাধে চলছে ভাঙাচোড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহন। এসব ফিটনেসবিহীন গাড়িতেই বেশি ভাড়া দিয়ে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। একপ্রকারে জিম্মি হয়ে পড়ছে সাধারণ জনগণ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকাসহ সারাদেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৫৬ লাখ ৬১ হাজার ৪১৮, এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার। তবে সড়ক নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের ধারণা, দেশে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা বাস্তবে আরও অনেক বেশি। ৮৩টি যানবাহনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ফিটনেস নিয়ে এক গবেষণায় দেখা যায়, ২৪% যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট সঠিক কিংবা গ্রহণযোগ্য নয়। ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই ৩৩% বাসের, ৫৬%-এর স্পিড গভর্নর সিল নেই। বাইরের ফিটনেসবিহীন যানবাহনও অহরহ প্রবেশ করছে রাজধানীতে। মাঝে মাঝে পুলিশ ও বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অভিযান চালালেও তার কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। নির্বাধেই চলাচল করছে এসব যানবাহন। ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে ফিটনেসবিহীন মোটরযান ধ্বংস বা চিরতরে ব্যবহারের অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছে বিআরটিএ। সড়কে চলাচলের জন্য যেকোনও যানবাহনের যান্ত্রিক ও কাঠামোগত ফিটনেস থাকতে হয়। কাঠামোগত দিকটি চোখে দেখে দেওয়া গেলেও যান্ত্রিক দিক পুরোপুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর নির্ভর করতে হয়। অভিযোগ রয়েছে অর্থের বিনিময়ে ফিটনেসবিহীন গাড়িকে ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়। ফলে ফিটনেসবিহীন গাড়িও পেয়ে যাচ্ছে ফিটনেসের সনদ। তাছাড়া দেখা যায় ফিটনেস সনদ হালনাগাদের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নিয়মিত করছে না বাস মালিকরা। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিকট শব্দ ও কালো ধোঁয়া পরিবেশ দূষিত করে। ফলে মানুষের নানা অসুখবিসুখ হয়। তাছাড়া এসব লক্কড়ঝক্কড় গাড়িতে যেতে যাত্রীরাও চরম ভোগান্তি সম্মুখীন হয়। অনেকেই গাড়ির হেল্পার থেকে চালক হয়েছে। তাদের নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ। কিন্তু তাদের হাতেও দেখা যায় অরিজিনাল লাইসেন্স। এসব কারণে অবাধে সড়কে ঝড়ছে প্রাণ। তাই এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে সরকারকে এখনি নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ। শুধু কাগজপত্র আপডেট করলেই ফিটনেসবিহীন গাড়ি ফিট হয়ে যায় না। গাড়ির ইঞ্জিন, চেসিস, সিট, বাম্পার, ব্রেক, লাইট, বডিসহ সবকিছু বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। চোখের দেখা, নামমাত্র চেকিং পরিত্যাগ করতে হবে। গাড়ি ও চালকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আসল, না নকল তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। নকল ধরা পড়লে আইনি প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। লাইসেন্সবিহীন বা অদক্ষ চালক যাতে সড়কে গাড়ি চালানোর সুযোগ না পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ তথা সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সরকারের পাশাপাশি পরিবহন মালিক, শ্রমিক, যাত্রী, পথচারী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করতে হবে। আর তাহলেই থামানো যাবে এই মৃত্যুর মিছিল।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button