কঠোর পদক্ষেপ নিন
ভুল চিকিৎসা থামছে না
একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে চিকিৎসা হলো অন্যতম। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেক মানুষের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তবে এই চিকিৎসা খাতেই চলছে সবচেয়ে বেশি নৈরাজ্য। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমগুলোয় মাঝে মধ্যেই চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যা রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো। একের পর এক ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু, অঙ্গহানি, চিকিৎসার খরচের নামে সর্বস্ব হাতিয়ে নেওয়া, টাকার জন্য লাশ আটকে রাখাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তথাকথিত হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে। হাসপাতালগুলোর নির্দয় চিকিৎসাবাণিজ্যে নিরীহ মানুষ জিম্মি। আমাদের দেশের অধিকাংশ হাসপাতাল এবং ক্লিনিক মালিক ও ডাক্তাররা রোগীর চিকিৎসার চেয়ে অর্থ উপার্জনের প্রতিই প্রাধান্য দেন বেশি। এখন বাড়ির পাশে, হাটে-ঘাটে অনেক হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার দেখা যায়। কিন্তু এত হাসপাতাল থাকার পরও আমাদের চিকিৎসাসেবার উন্নতি হচ্ছে না বহুলাংশে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবসাটাই যেন এখন মুখ্য হয়ে গেছে। দেখা যায়, অনেক রোগী কিছু হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে চিকিৎসাসেবা নিতে চায় না বড় অঙ্কের টাকার পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভয়ে। আবার কিছু চিকিৎসক তাদের নির্ধারিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা না করালে পরবর্তীকালে রোগীর ফাইলও দেখেন না। কিছু চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অস্পষ্ট হস্তাক্ষরে লেখার কারণে রোগীকে ভুল ওষুধ খেয়ে মৃত্যুঝুঁকির সম্মুখীনও হতে হয়। এরকম ঘটনা এখন অহরহই ঘটছে। সরকারের অনুমোদন না থাকলেও এ ধরনের চিকিৎসকরা দেশের আনাচে-কানাচে চিকিৎসাবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এর পরেও দোষী চিকিৎসকদের তেমন কোনো শাস্তি হয় না। আরও চিকিৎসকের অন্যায় আচরণ, অবহেলা, ভুল চিকিৎসায় প্রাণ হারানোর ঘটনা বাড়ছে, যা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। চিকিৎসার ভুল করা মানে রোগীর জীবনকে বিপন্ন করে তোলা। যেখানে দেশের প্রতিটি মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়া মৌলিক অধিকার। এ অধিকার কারও দয়া দাক্ষিণ্যের বিষয় নয়! একের পর এক ভুল চিকিৎসা জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ফলে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নয়ন তবু কেন মানুষ ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার হযবরল অবস্থা নিরসন করা প্রয়োজন। কিছু বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্বাস্থ্যসেবার নামে রোগীদের জিম্মি করেছে। জবাবদিহি না থাকায় স্বাস্থ্যখাতের উন্নতির চেয়ে অবনতির প্রবণতা বাড়ছে। যে করেই হোক এ প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। চিকিৎসার নামে যারা মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন, হয়রানি করছেন, সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।