রিকশা মুক্ত রাজধানী গড়তে নিতে হবে পদক্ষেপ
ঢাকা এখন যানজট আর রিকশার শহরে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নিতে রাজধানীতে ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, এলিভেটেড হাইওয়ে হচ্ছে কিন্তু যানজটের কারণে রাজধানীর মানুষের যানজট ভোগান্তি কমছে না। বর্তমানে রিকশায় সয়লাব ঢাকা। অলিতে-গলিতে, মহাসড়কে, ভিআইপি রোডে সবখানে শুধু রিকশা আর রিকশা। পাশাপাশি এখন সাধারণ রিকশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক যার সবই অবৈধ। এসব অদক্ষ ও আনাড়ি রিকশাচালকদের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় রাজধানীতে চলাচলকারী রিকশার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের নিবন্ধন রয়েছে মাত্র ৭৯ হাজার ৫৪৭টির। বাকি সব অবৈধ। মূলত যানজট নিরসনে ১৯৮৬ সালের পর থেকে রাজধানীতে রিকশার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দেয় সিটি কর্পোরেশন। তারপরও থেমে নেই এই রিক্সার উৎপাদন ও বিক্রি। এমনিতেই ঢাকা অপরিকল্পিত নগরী তার উপর পথে রিকশার যন্ত্রণা যন্ত্রচালিত যানবাহনের গতি থামিয়ে দিচ্ছে। নিয়ম নীতি না মানায় রাজধানী কার্যত অবৈধ রিকশার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়ে গেছে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বৈধ লাইসেন্সধারী রিকশার তুলনায় ১০ গুণ রিকশা রাজধানীতে চলাচল করছে। অন্তত ৩০টি সংগঠন ও সমিতির নামে এসব অবৈধ রিকশা রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব সমিতি বা সংগঠনের পক্ষ থেকে রিকশাগুলোতে দেওয়া হয় কথিত নম্বর প্লেট। একেকটি রিকশায় এ ধরনের দুই থেকে পাঁচটি করে নেমপ্লেট দেখা যায়। অনিবন্ধিত এসব রিকশায় রাজধানীর যানজট বাড়ার পাশাপাশি বিশাল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। এমনকি রিকশার বৈধতার বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা নেই অধিকাংশ রিকশাচালকের। এসব রিকশাচালকের বেশিরভাগেরই নেই ট্রাফিক রুলস সম্পর্কে কোন ধারনা ফলে দেখা যায় তারা এসব নিয়ম না মেনেই রাস্তায় রিক্সা চলায় এবং সৃষ্টি করে যানজটের। পাশাপাশি রিকশার কারণে রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও যানজটকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি কর্মঘন্টা। রাজধানীর যানজট নিরসনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তার বেশিরভাগই বাস্তবসম্মত নয়। এ কারণেই যানজট নিরসনে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ থেকে সফলতা আসছে না। দেখা যায় রিকশার কারণে ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের গতি আসছে না। চলতে গিয়ে রিকশার ভিড়ে আটকে যায় গাড়ি। যানজট নিয়ন্ত্রণ তথা নগরবাসীর ভোগান্তিতে কমাতে রিকশা নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। তাই এখনি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ। প্রথমত প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। আর যেগুলোতে চলবে সেগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে চলার ব্যবস্থা করতে হবে। নগরের অলিগলিতে যে ব্যাটারি চালিত রিকশাগুলো চালু হয়েছে সেগুলো বন্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এখনও বহু মানুষ এই পেশার সঙ্গে জড়িত। তাই সড়ক থেকে একেবারে রিকশা তুলে দেয়া সম্ভব নয়। রিকশা চলাচলের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে। প্রধান সড়ক থেকে রিকশার পরিবর্তে বেশিসংখ্যক যাত্রী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন যানবাহন নামানোর উদ্যোগ নিতে হবে।