গ্যাস সংকটে মুখ থুবড়ে পড়ছে শিল্প
তীব্র আকার ধারণ করেছে চলমান গ্যাস সংকট। ঘূর্ণিঝড় রিমালে একটি এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত কয়েক সপ্তাহে গ্যাস সংকট আরও বেড়েছে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে উৎপাদন কমে এসে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। দেশের গ্যাস সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গাজীপুরের শিল্পাঞ্চল। গত কয়েকদিনে এখানকার তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে। সাভার, কোনাবাড়ী, নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের শিল্পাঞ্চলে চলছে এই সংকট। গত দেড় যুগে সাধারণত শীতকালে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি হতো। মূলত শীতে চাহিদা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং সঞ্চালন ও বিতরণে অপচয় বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হতো। তবে গত তিন বছরে এ পরিস্থিতি বদলে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কমিয়ে বা নিয়ন্ত্রিত উপায়ে আমদানি করছে সরকার। স্থানীয় মজুত কমতে থাকায় গ্যাস উৎপাদনও বিদ্যমান পরিমাণের চেয়ে বাড়ানোর সুযোগ নেই। এমন অবস্থায় আর্থিক কারণে কিংবা কারিগরি কারণে অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এলএনজি আমদানি কমে গেলে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস-সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। কলকারখানা মালিকরা সরকারের একাধিক দপ্তরে চিঠি দিলেও মিলছে না প্রতিকার। ‘তীব্র গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বিগত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে টেক্সটাইল মিলগুলো স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। কয়েক মাস ধরে মিলগুলো তাদের উৎপাদন ক্ষমতার গড়ে ৪০-৫০ শতাংশ ব্যবহার করতে পেরেছে। ফলে সুতা ও কাপড়ের উৎপাদন কমেছে। একই সঙ্গে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ ফেব্রিক প্রসেসিং ব্যয়ও বেড়েছে, যা এ খাতের প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ করছে।’ গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। বেড়েছে লোডশেডিং। সিএনজি রিফিলিং স্টেশনে গিয়ে গ্যাস না পেয়ে কিংবা কম চাপের কারণে কাক্সিক্ষত পরিমাণের চেয়ে কম গ্যাস নিয়ে ফিরছে অনেক সিএনজিচালিত গাড়ি। এই গ্যাস পাওয়ার জন্যও ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনগুলোর সামনে সারিতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে গাড়িগুলোকে। ফলে নানারকম সংকট ঘিরে ধরেছে অর্থনীতিকে। এই সংকটের মধ্যেও বেসরকারি খাতের কারণেই এখনও কিছুটা গতি ধরে রাখা গেছে। কিন্তু শিল্প খাতেও যেভাবে একের পর এক সংকট বাড়ছে তাতে অর্থনীতির ক্ষতগুলো আরও গভীর হবে। তাই সরকারের উচিত শিল্প খাতের স্বাভাবিক গতি ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।