নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়

চলছে গণহারে গ্রেপ্তার
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, সংঘাত, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। তবে এতে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার পর তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, কোনো গণগ্রেপ্তার হচ্ছে না। গত মঙ্গলবার তিনি বলেন, অনেকেই বলছেন আমরা গণগ্রেপ্তার করছি। কোনো গণগ্রেপ্তার আমরা করছি না। মন্ত্রী বলেন, আমরা কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করছি না। গোয়েন্দা তথ্য, ভিডিও ফুটেজ, সাক্ষী সাবুদ নিয়ে যাদের আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি, তাদেরই গ্রেপ্তার করছি। ভুলক্রমে যদি কেউ নিয়ে আসে থানায় আমাদের অফিসাররা তাদের চেক করে যদি মনে করেন তিনি নিরপরাধ তাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা মন্ত্রীর কথায় আশ^স্ত হতে চাই। কিন্তু প্রকৃতক্ষেত্রে অনেক উল্টো চিত্রও দেখা যাচ্ছে। ২১ জুলাই রাত থেকে রাজধানীতে চিরুনি অভিযান শুরু করে পুলিশ ও র্যাব। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্রেপ্তার অভিযানে ‘ব্লক রেইড’ দেওয়া হচ্ছে। সহিংসতায় কারা জড়িত ছিলেন, তা বের করতে ভিডিও ফুটেজ ও ছবি বিশ্লেষণ করে তালিকাও করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষার্থী, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের পাশাপাশি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামি ও তাদের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও আছেন। কেউ সহিংসতা করলে সরকার তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু সন্দেহজনক হিসেবে হাজার হাজার লোককে গ্রেপ্তার করা কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। পুলিশের দাবি, অভিযানে শুধু দুষ্কৃতকারীদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু সহিংসতায় জড়িত ছিলেন, এমন লোকদেরই যদি গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে যাঁরা ঘটনাস্থলে ছিলেন না, তাঁদের কেন গ্রেপ্তার করা হলো? সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও গত মঙ্গলবার বলেছেন, যাঁরা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত নন, তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, সংঘর্ষের সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এমনকি ঘটনাস্থলে না থাকা ব্যক্তিদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযানে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রথমে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে মামলা করে। পরে সন্দেহভাজন হিসেবে যাঁদের ধরা হয়, তাঁদের নাম আসামি হিসেবে দেখানো হয়। এ ধরনের গ্রেপ্তার অভিযানে থানা-পুলিশের মধ্যে মামলার আসামি বেশি দেখানোর প্রতিযোগিতা চলে। গ্রেপ্তার অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবশ্যই আইন মেনে চলতে হবে। গণগ্রেপ্তার করে নিরীহ ও নির্দোষ মানুষকে হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।