কোটা সংস্কার আন্দোলন: মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা

বর্তমানে অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশ অনেক চাপের মধ্যে রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের উধ্বগতিতে মানুষ দিনে এনে দিনে খাওয়াটাই এখন কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি নাগালের বাইরে হওয়াতে মানুষের জীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও মানুষের মাঝে স্বস্তির খবর মিলেনি। মূল্যস্ফীতির এই উধ্বগতিতে এমনিতেই মানুষ চাপের মধ্যে রয়েছে এর মধ্যে সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে অর্থনীতির উপর চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। যার ফলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে। তাহলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের কী হবে? টানা ৩ বছর ধরে ডলারের মূল্যে ঊর্ধ্বগতি দেশের অর্থনীতিকে ভোগাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ এ সংকটের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ দুই অঙ্কের ঘর ছুঁইছুঁই করছে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ৩৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর ২০২৩-২৪ শেষ করেছে সরকার। সম্প্রতি কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নতুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতেই আবারও ধাক্কা খেল দেশের অর্থনীতি। দীর্ঘদিনের সংকটের সঙ্গে যোগ হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সৃষ্ট অচলাবস্থা। এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজের তালিকা ব্যবসাবাণিজ্য ও সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য চরম হুমকি বলছেন সংশ্লিষ্টরা। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ই-কমার্সে দিনে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আরও উসকে দিয়েছে এ অচলাবস্থা। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা পুড়িয়ে দেওয়ায় উড়ালসড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। মেট্রোরেল চালুর এক বছরের মধ্যেই বড় ধরনের ধাক্কা খেল। পুনরায় মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় সরকার রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সান্ধ্য আইন জারির পর বন্ধই হয়ে যায় সব শপিং মল ও দোকানপাট। এতে প্রতিদিন লোকসান হয়েছে হাজার কোটি টাকা। এছাড়া আন্দোলনের এ সময়টায় দেশের বিভিন্ন বন্দরের কার্যক্রম মঙ্গলবার পর্যন্ত পুরোপুরি বন্ধ ছিল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশের ৪৩ শুল্ক স্টেশন দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার চালান পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ হিসাব আমলে নিলে গত তিন দিনে প্রায় ১৮ হাজার চালান বন্দরে আটকা রয়েছে; যার একটা বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে। একে তো এই আন্দোলনকে ঘিরে দিনমজুরদের কষ্টের শেষ ছিল না তার উপর এখন মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি হওয়ার আশঙ্কা। তাহলে সাধারণ মানুষদের বাঁচার উপায় কিসে? আমরা চাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব যেন মূল্যস্ফীতিতে না পড়ে। এর জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। দ্রব্যমূল্যে যেন বৃদ্ধি না পায় সেদিকে কর্তৃপক্ষকে নজরদারি বাড়াতে হবে। আমরা আশা করছি সরকার ভোগান্তি দূর করে জনগণের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবেন।