দেশের সম্পদ রক্ষায় নাগরিকদেরই সচেতন হতে হবে

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ দেখল মৃত্যুর মিছিল। প্রতিটি হত্যায় মানবিকতার পরাজয় ঘটে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হলো তা কারও অজানা নেই। শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক কীভাবে সাউন্ড গ্রেনেড, টিআর গ্যাস ছুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলছাড়া করা হলো, তা টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করার বদৌলতে দেশবাসী দেখেছেন। সরকারের অদূরদর্শিতায় হারিয়ে গেল শত শত প্রাণ। এর মধ্যে রয়েছে অন্তত ৪০ জন নিষ্পাপ শিশু! তবু এতটুকু অনুতাপ বোধ মনে জাগ্রত হয়নি কারও। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর পাওয়ার পরপরই সোমবার দুপুর থেকে পথে পথে শুরু হয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের বিজয়োল্লাস। এ সময় বিপুলসংখ্যক মানুষ গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জাতীয় সংসদ ভবনে ঢুকে পড়েন। অনেকে সেখানে ভাঙচুর ও লুটপাটে অংশ নেন। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে। ভাঙচুর চালানো হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে। হামলার শিকার হয় কয়েকটি গণমাধ্যম কার্যালয়। রাজধানীতে পুলিশ সদর দপ্তর এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় নির্বিচার হামলা চালানো হয়। সারা দেশে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও দলটির নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। অনেক স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে। এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আনন্দের আতিশয্যে এমন কিছু ঘটছে, যা কাম্য নয়। গণভবন, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ অন্যান্য ভবন থেকে সব সামগ্রী গণহারে নিয়ে গেছে সাধারণ মানুষ। ‘প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নয়’ আখ্যা দিয়ে যারা এসবের সমালোচনা করেছেন, তারাও বলেছেন রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাচার হওয়া বন্ধে সরকার আন্তরিক ছিল না। তাই বিভিন্ন সরকারি ভবন থেকে সম্পদ লুটে নেয়া নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতে পারছি না। রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে দ্রুত শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা করছে মানুষ। একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই। সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের এ পরিবর্তনের দিকে। এ সময় হামলা, অগ্নিকা-, ভাঙচুর ও লুটপাটের দৃশ্য বহির্বিশ্বের কাছে কোনো ভালো অর্থ বহন করবে না, বরং ক্ষুণ্ন করবে দেশের ভাবমূর্তি। তাই দেশের কোথাও যেন সুযোগসন্ধানীরা আর এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক ও সংযত থাকতে হবে। ক্রান্তিকালে দেশের সম্পদ রক্ষায়ই নাগরিকদেরই সচেতন হতে হবে। অন্তরবর্তিকালীন কিংবা যে নামেই পরিচিত হোক না কেন; নতুন সরকার দেশের সম্পদ রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।
