দেশের এই পরিবর্তন দির্ঘস্থায়ী ফলপ্রসূ হোক

শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন সহজেই সামাল দেওয়া যেত, তাকে এমন একটি সহিংস পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়ার পেছনে যা কাজ করেছে, তা হচ্ছে সরকার ও বিশেষ করে সরকারপ্রধানের একগুঁয়ে আচরণ। এর কারণে কোটা সংস্কারের মতো একটি নিরীহ ও অরাজনৈতিক আন্দোলনে তিন শতাধিক মানুষকে জীবন দিতে হলো, মূল্যবান রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস হলো। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। এ পদত্যাগ স্বাভাবিক তো থাকলই না, বরং জনরোষের অনিবার্য পরিণতি বরণ করতে হলো তাকে। আগে বিদেশ যেতে বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে মন্ত্রী ও পদস্থ আমলাদের উপস্থিত থাকা একপ্রকার নিয়মে পরিণত হয়েছিল। এবার তিনি কারও না জানিয়ে চুপিসারে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়লেন। বিদেশে যেতে বিরাট বহর নিয়ে যেতেন। প্রধানমন্ত্রীর এই পদত্যাগ কিংবা দেশত্যাগকে কোনোভাবেই সম্মানজনক বলা যাবে না। কত অর্থ পাচার হয়েছে, কত কা- ঘটেছে; সেটি নানাভাবে গণমাধ্যমে এসেছে। জনগণের কাছে জবাবদিহির দায় না থাকায় রাষ্ট্রযন্ত্রের শক্তিপ্রয়োগের ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে ‘মানি মেকার’ এবং ‘রুল মেকার’ যোগসাজশে একচেটিয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বন্দোবস্ত তৈরি হয় একদলীয় কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা। শেখ হাসিনা নিজেকে দল ও দেশের ঊর্ধ্বে ভাবতেন এবং তাঁর গত ১৫ বছরের শাসনে প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও দেশ ও দলের চেয়ে ব্যক্তি হিসেবে তাঁর একক কর্তৃত্বই দেখা গেছে। পদত্যাগ ও দেশত্যাগের আগের দিনও শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন দমনে দলের লোকজনকে অস্ত্রশস্ত্রসহ নামিয়ে দেশজুড়ে যে সহিংসতা ঘটালেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন কলঙ্কজনক ঘটনার দ্বিতীয় কোনো নজির নেই। এই আন্দোলনে ২১৩ জনের মৃত্যুর পরও যদি তিনি সংযত হতেন, তাহলে সেদিন ১৪ জন পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি এড়ানো যেত। এই দায় থেকে তিনি কোনো দিন মুক্তি পাবেন না। তাই পরবর্তি সরকারকে অবশ্যই আরওবেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর এখন দেশে আইনানুগ কোনো সরকার নেই। আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি, নাগরিক সমাজ ও সংবিধানবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি গ্রহণযোগ্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কাজটি দ্রুত করতে হবে। একটি গ্রহণযোগ্য সরকার গঠনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য একটি স্থায়ী রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পথ তৈরি করা গেলে এই পরিবর্তনকে ফলপ্রসূ করা সম্ভব হবে।