সম্পাদকীয়

৬০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী গ্রামাঞ্চলে, প্রতিকার করুণ

ডেঙ্গু প্রতিনিয়ত ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এতে জনজীবনে হতাশা নেমে এসেছে। দেশে প্রতিবছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। উদ্বেগের বিষয় হলো আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়লেও এটি নির্মূলে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা পাওয়া যায়নি। যার ফলে বছরে বছরে এটি ভয়াবহ ভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে যেভাবে মানুষ মরছে এমন মৃত্যুর উচ্চ হার বিশ্বের আর কোথাও নেই। দৈনিক পত্রিকার তথ্যে থেকে জানা যায়, চলতি বছরে যতজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে তার ৬০ শতাংশ রোগী গ্রামাঞ্চলের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের ৫৯.৭৬ শতাংশ ঢাকার বাইরের। তবে মৃতদের মধ্যে ৭২ শতাংশ ঢাকায়। আক্রান্তদের মধ্যে ৩৯.১ শতাংশ নারী ও ৬০.৯ শতাংশ পুরুষ। মৃতদের মধ্যে ৫১.৬ শতাংশ নারী ও ৪৮.৪ শতাংশ পুরুষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, বরগুনা ও নরসিংদী জেলায়। কক্সবাজার জেলায় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে ৯৩৭ জন। এরপর চট্টগ্রামে ৪৫৩, নরসিংদীতে ৩৫০, চাঁদপুরে ৩০১ ও বরগুনা জেলায় ২৯৮ জন। চলতি বছরের প্রথম দিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বিপুল হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল সেই হিসেবে ধারণা করা হয়েছিল ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে কিন্তু বিগত বছর গুলোর তুলনায় পরিসংখ্যান অনুযায়ী কিছুটা কম রয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে দেশে আক্রান্ত হয়েছে সাত হাজার ৭৬৭ জন। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৬৪ জনের। গত বছর এ সময় পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৭৮ হাজার ২৮। মারা যায় ৩৬৪ জন। এর আগের ২০২২ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত তিন হাজার ৪০৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল ১৫ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের তথ্য বলছে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত যত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, তা গত বছরের তুলনায় ১০ ভাগের এক ভাগ। যদিও পরিসংখ্যানে স্বস্তির তথ্য ফুটে উঠছে তবে উদ্বেগের বিষয় হলো গ্রামাঞ্চলের ডেঙ্গু প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়ে। অভিযোগ উঠেছে, সমস্যা মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া নিয়ে। এছাড়াও দেশব্যাপী জোরদার প্রতিরোধ কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ছে না। চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি নি¤œমুখী। ঢাকার বাইরে অন্য ১০টি সিটি করপোরেশনে মশা নিধনে কিছু কার্যক্রম থাকলেও ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলায় স্থানীয় সরকারের কোনো কার্যক্রম নেই। তাই ওই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় সরকারের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নূন্যতম একজন হলেও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করতে হবে এবং কীটনাশক ও মেশিন-যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে সরকারকেই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button