সম্পাদকীয়

দেশের বস্ত্র খাতকে বাঁচাতে হবে

দেশের শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। পরের ২০২১-২২ অর্থবছর এই হার ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে আসে। তার পরের ২০২২-২৩ অর্থবছর নেমে আসে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং সদ্য বিদায়ি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে এই হার ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশে নেমে আসে; অর্থাৎ শিল্পে উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে। করোনার সময়ে দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা থাকলেও বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল, পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু করোনা-পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগ পরিবেশের অবনতি হয়েছে। তার প্রমাণ মিলছে ২০২৩-২৪ সালের ব্যবসার পরিবেশ-সূচকে (বিবিএক্স)। বিগত সরকারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরূপ প্রভাব অন্যান্য সেক্টরের মতো বস্ত্র খাতেও পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হওয়া দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে বর্তমানে এ খাতটি মহাসংকটে পড়েছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, মিল মালিকরা এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে ব্যস্ত। অধিকাংশ দেশীয় সুতা ও বস্ত্র কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তৈরি পোশাক শিল্পেও পড়তে শুরু করেছে এর নেতিবাচক প্রভাব। শিল্প মালিকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক চক্র অত্যন্ত সুকৌশলে বাংলাদেশের পুরো বস্ত্র খাতকে করায়ত্তে নেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এখনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলে আগামীতে ভিনদেশিদের একচেটিয়া ব্যবসার জেরে বাংলাদেশকে পুতুল হয়ে থাকতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো সুতা ও বস্ত্র খাতের বাজার পুরোপুরি দখল করতে সুকৌশলে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একদিকে তাদের দেশে তারা এ খাতকে দিচ্ছে আকর্ষণীয় প্রণোদনা (ইনসেনটিভ) সুবিধা, অন্যদিকে ব্যাংক ঋণের সুদের হারও রেখেছে সর্বনি¤œ। ফলে বাংলাদেশের তুলনায় তাদের উৎপাদন খরচ অনেক কম পড়ছে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে তুলা ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দুষ্টচক্রের কারসাজি তো রয়েছেই। এছাড়া পণ্য উৎপাদন করতে গেলে শিল্প মালিকদের দেশেও গ্যাস-বিদ্যুতের চরম সংকটের সম্মুখীন হতে হয়। শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানির সংকট রয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং। রাজধানীর ঢাকায় বিদ্যুতের সংকট না থাকলেও ঢাকার বাইরে অবস্থা ভিন্ন। এ প্রেক্ষাপটে সুতা ও বস্ত্র শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের এগিয়ে আসা জরুরি। সেক্ষেত্রে গোটা বস্ত্র খাতের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার সর্বনি¤œ পর্যায়ে নিয়ে আসা, দেশীয় সুতা ও কাপড় প্রস্তুতকারকদের ক্যাশ ইনসেনটিভ প্রদান, বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটের সমাধান, শিল্প সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ, পাশাপাশি শিল্প-আগ্রাসন প্রতিরোধে কর্মকৌশল বের করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button