সম্পাদকীয়

ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাংক খাতে নানা সংকট বিদ্যমান। মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, আমানত ঘাটতি ইত্যাদি সংকটে জর্জরিত দেশের ব্যাংক খাতগুলো। এর মধ্যে আবার যুক্ত হয়েছে তাদের আয়-ব্যয়ের আকাশচুম্বী অনুপাত। একটি সংবাদ পত্র থেকে জানা গেছে, গত বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতের আয়-ব্যয়ের অনুপাত ছিল ৭১ শতাংশ। ২০২২ সালের জুনে এ অনুপাত ছিল ৫৭ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালে দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংকগুলোকে ব্যয় কমানোর নির্দেশনা দেয়। এর মধ্যে একটি প্রজ্ঞাপনে জ্বালানি ব্যয় ১০ শতাংশ ও বিদ্যুৎ ব্যয় ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। অন্য প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকের জন্য কোনো ধরনের গাড়ি কেনা যাবে না। আর জরুরি ও অপরিহার্য ক্ষেত্র বিবেচনায় আপ্যায়ন, ভ্রমণ, কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, আসবাব ও অন্যান্য মনিহারি খাতে বরাদ্দ করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলোর আয়-ব্যয় অনুপাতের এমন অসামঞ্জস্যতা মূলত ব্যাংক খাতগুলোর অনিয়ম ও সুশাসনহীনতাকে প্রতিফলিত করছে। দলীয় প্রভাবের কারণে কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক কার্যক্রম মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংক তো সরাসরি আওয়ামী লীগের দখলে চলে গেছে বলেও সংশ্লিষ্টদের অনেকের অভিযোগ। সম্প্রতি গণআন্দোলনের মুখে সরকারের পতনের পর সেসব ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে। তবে কয়েকটি ব্যাংক, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের আমলে দখল হওয়া তিনটি ব্যাংকে গত কয়েকদিন ধরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতে দ্রুত শৃঙ্খলা ফেরানো জরুরি হয়ে পড়েছে। পর্যায়ক্রমে দখলে থাকা ব্যাংকগুলো নিয়মের মধ্য দিয়ে প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি যেসব অনিয়ম হয়েছে, সেসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্যাংক খাতে দুষ্ট চক্র ভেঙে ফেলতে এবং স্বচ্ছতা আনতে তাই একটি সুনির্দিষ্ট, সময় উপযোগী, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, জবাবদিহিমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি। স্বচ্ছতার স্বার্থে এ খাতের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরাও দরকার। অবশ্য নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সবার মাঝেই প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছে। আমরা মনে করি, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে দ্রুত ব্যাংক খাতের ধস ঠেকানো ও শৃঙ্খলা ফেরানো প্রয়োজন। কারণ ব্যাংক খাতসহ অর্থনৈতিক পরিবেশ যথাসম্ভব দ্রুত স্বাভাবিক করতে না পারলে সংকট আরও বাড়তে পারে, বিনিয়োগ কমতে পারে; ফলে থমকে যেতে পারে অর্থনীতি। তাই অনতিবিলম্বে এ খাতে নিয়ম-কানুন বাস্তবায়ন করা জরুরি। একই সঙ্গে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তৎপর হতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button