সম্পাদকীয়

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শক্ত পদক্ষেপ জরুরি

গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তের জীবনযাপনও কঠিন হয়ে পড়েছে। গত ৩ দশকে আর কখনোই এত দীর্ঘসময় উচ্চ মূল্যস্ফীতি স্থায়ী হতে দেখা যায়নি। দেশে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। বিবিএসের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এর আগে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাদের অভিযোগ, বিবিএস যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে, তাতে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিবিএস এই প্রথম মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান প্রকাশ করল, যাতে দেখা যাচ্ছে দেশে মূল্যস্ফীতি আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের সময় মূল্যস্ফীতির অঙ্ক ইচ্ছে করেই কমিয়ে দেখানো হতো, যাতে জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া না হয়। রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য হয়তো এটা করা হয়েছিল। বাজারের জিনিসপত্রের দামের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির তথ্যের মিল ছিল না। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখন অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতি একধরনের করের মতো। যা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ বাড়ায়। এমনিতেই বাজারের জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া। তার সঙ্গে চিকিৎসা, পরিবহনসহ খাদ্যবহির্ভূত খাতেও খরচ বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতির এ চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। তাই বর্তমানে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট বন্ধে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিজয়ী শিক্ষার্থীরা। আশা করা যায়, এর প্রভাবে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমবে। তবে বহু কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। যে কোনো পণ্যের উৎপাদন পর্যায় থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত আসতে বহুবার হাতবদল হয়। যতবার হাতবদল হয়, ততবারই পণ্যের দাম বাড়ে। কাজেই সরষের ভেতরের ভূত তাড়ানোর পাশাপাশি আমদানিনির্ভরতা কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প উপায়ে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো, আমদানি পণ্যের শুল্ক কমানো, যেসব পণ্যের আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে, সেটি তুলে দেওয়া এবং পণ্য পরিবহনে ঘাটে-ঘাটে যে চাঁদাবাজি হতো, সেটা কঠোর হাতে রহিত করা। জ¦ালানির দামও মূল্যস্ফীতির বড় একটা কারণ। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানির দাম কম হলেও সরকারের মাত্রাতিরিক্ত করের কারণে ভোক্তাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এতে সরকার লাভবান হলেও নাগরিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, জ¦ালানির দাম কমানো হলে কৃষি ও শিল্প পণ্য উৎপাদন খরচও কমবে। কমবে পরিবহণ ব্যয়ও। এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে একটু স্বস্তি দিতে হলে মূল্যস্ফীতি কমাতেই হবে। মনে রাখতে হবে, বাজারে অভিযান চালিয়ে পণ্যের দাম কমানো যাবে না। দাম কমাতে হলে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতেই হবে। অসাধু ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজসহ অন্য যাদের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এদের বিরুদ্ধে যত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়, ততই মঙ্গল।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button