সম্পাদকীয়

কমছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ!

সম্প্রতি টানা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি পানির ঢলে ভেসে যায় প্রায় ১৩টি জেলা। এতে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বানবাসী। এই আকস্মিক বন্যাকে অনেকে মনে করছেন স্মরণ কালের ভয়াবহ বন্যা। বন্যাতে ঘরবাড়ি পানিতে ভেসে যাওয়ায় অধিকাংশ মানুষ ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়েছে। এছাড়াও একদিনেই ভেসে যায় হাজার হাজার মাছের ঘের। এতে কোটি কোটি টাকার লোকসানে পড়ে যায় মাছ চাষিরা। এভাবে এই বন্যাকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক পর্যায়ে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়ে যায় বানভাসিরা। গত ২২ আগস্ট থেকে টানা ১ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে মানুষের এই বিপর্যয় চলছেই। এই দুর্ভোগে সবার একটাই প্রত্যাশা দ্রুত যেন পানি নিষ্কাশন হয়ে যায়। ইতোমধ্যে দেশের বন্যাদুর্গত জেলাগুলোতে পানি ক্রমান্বয়ে কমছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো পানি কমতে থাকলেও ভুক্তভোগীরা নিজেদের বাসস্থানে ফিরত যেতে পারছে না। এই আকস্মিক বন্যার অনেকের ঘর বাড়ি পানি ¯্রােতে নিয়ে গেছে। আবার অনেকে ঘরবাড়ির অবস্থা হয়েছে বেহাল দশা। পত্রপত্রিকার খবরাখবর থেকে জানা যায়, গত বুধবার বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বর্তমানে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে গোমতীর পানি। মঙ্গলবার বিকেলে যা ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। জেলার দক্ষিণের কয়েকটি উপজেলায় সামান্য পরিমাণে কমেছে বানের পানি। তবে মানুষের দুর্ভোগ ও ত্রাণের জন্য হাহাকার বেড়েছে। বন্যায় উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে টিলাগাঁও ইউনিয়নের মিয়ার পাড়া, হাজীপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকা। এই ইউনিয়নের প্রায় তিন শত পরিবারের বসতঘর পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নেমে গেলেও তারা এখনো ঘরে উঠতে পারেনি। অনেকেই বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরতে না পেরে এখনো বাঁধের ওপর বা উঁচু স্থানে ঝুপড়ি ঘর তুলে বাস করছে। অনেকেই মনু নদীর পারে উঁচু জায়গায় অস্থায়ী ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে রয়েছে। এভাবেই প্রায় প্রত্যেকটি বন্যা কবলিত জায়গায় পানি কমলেও মানুষ নিজেদের বাসস্থানে যেতে পারছে না। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র তাই এরা চাইলেই নিজেদের ঘর মেরামত করতে পারছে না। যেহেতু বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সেহেতু আমরা মনে করছি ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোটা সরকারের কর্তব্য। সুতরাং ভুক্তভোগীদের দ্রুত ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি একটি সাময়িক টিম গঠন করে ক্ষতিগ্রস্থ প্রত্যেকটি জায়গার বাসস্থান গুলো মেরামত ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আশা করছি এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগে মানুষের দুর্ভোগ থেকে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button