সম্পাদকীয়

শ্রমিক অসন্তোষ রোধে উদ্যোগ নিন

দেশের প্রধান রপ্তানি খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন কার্যক্রমের বিকল্প নেই। কিন্তু গত কয়েকদিনের অসন্তোষের কারণে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যে কোনো কারণেই হোক শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হলে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কেননা, এতে করে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়। ফলে দেশের শিল্পায়ন খাতে চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। একদিকে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের চাপ, অন্যদিকে কারখানার আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটানোর দ্বিমুখী চাপের মধ্যে রয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। অধিকাংশ পোশাক কারখানা আশুলিয়া এলাকাকেন্দ্রিক। নানামুখী উদ্যোগেও সাভার ও আশুলিয়ায় থামছে না শ্রমিক অসন্তোষ। এ অঞ্চলে যদি শ্রমিক অসন্তোষ দানা বাধে তাহলে পুরো রপ্তানি খাতই চ্যালেঞ্জে পড়বে। কাজেই শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন করে শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। জানা যাচ্ছে যে, নানা স্বার্থান্বেষী মহল শ্রমিকদের উসকানি দিচ্ছে। যদি এমন কোনো কিছু ঘটে থাকে তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা একান্ত আবশ্যক। আর এ ধরনের সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা। সরকারকে উদ্যোগী হয়ে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তারা শ্রমিক-মালিকসহ অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি ভালো সমাধান খুঁজে বের করতে পারেন। পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকের চেয়ে পুরুষ বেশি নিয়োগ দিতে হবে- প্রধান এ দাবিসহ আরও কিছু দাবি নিয়ে ১০ দিন ধরে অসন্তোষ চলছে শিল্পাঞ্চলে। পোশাক কারখানায় পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। তবে গত কয়েক বছরে নারী শ্রমিকের হার অনেক কমেছে। গবেষণা সংস্থা ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) পরিসংখ্যান বলছে, পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের হার এখন ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে। একসময় এ হার প্রায় ৮০ শতাংশ ছিল। তাই যত দ্রুত সম্ভব কারখানাগুলো চালু করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যেভাবে কারখানা বন্ধ ও শ্রমিক অসন্তোষ সংক্রান্ত খবর আসছে তা আমলে নিতে হবে। এ ছাড়া বহিরাগতদের উসকানি বা যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি রোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হলে তার প্রভাব কতটা আশঙ্কার সেটাকে এড়ানো যাবে না।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button