ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ

ডেঙ্গু একটি ভয়ানক ব্যাধি যা নিতে পারে মানুষের তাজা প্রাণ। প্রতিবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে পড়তে হয় হাজার হাজার মানুষকে। ফলে প্রতিবছর মেধাবী এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে প্রতিবছর চলতে থাকলে দেশে একসময় নেমে আসবে বিপর্যয়। ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় বিগত সরকার উদ্যোগ নিলেও তার সুফল খুব একটা পায়নি দেশবাসী। চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রভাব গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম থাকলেও সম্প্রতি ডেঙ্গুর অতিমারি ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় জনমনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, গত সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে জনমনে তৈরি হয়েছে হতাশা। গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১হাজার ১০২ জনে। আর চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৯ জনে। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মোট ভর্তি হয়েছেন ১৬ হাজার ৮১৯ জন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন সাত হাজার ২৯২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৯ হাজার ৫২৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিবেদনে জানায়, ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে পুরুষরা। মৃত্যু বেশি হচ্ছে নারীদের। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ১০ হাজার ১৩১ জন পুরুষ আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। আর নারী আক্রান্ত হয়েছে ছয় হাজার ৪৩৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫৩ জনের। অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৪৩.৩৫ শতাংশ ও মৃত্যুর ৬৭.৬৪৪ শতাংশ ঢাকায়। ঢাকার বাইরে আক্রান্ত ৫৬.৬৫ শতাংশ ও মৃত্যু ৩২.৩৬ শতাংশ। সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা সিটি মেয়রসহ বিভিন্ন জায়গার দায়িত্ব প্রাপ্তরা আত্মগোপনে চলে যান। ফলে রাজনৈতিক বেড়াজালে রাজধানী এবং দেশের বিভিন্ন জায়গাতে মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপের ত্রুটি দেখা দেয়। যার ফলে দৈনিক ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এছাড়াও বাড়ছে মৃত্যুর হার। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ থাকবে। এটি অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এডিস মশা নিধনে সিটি করপোরেশনগুলোর এখন সক্রিয় হওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করছি। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবাতেও নজরদারি করতে হবে। সুতরাং ডেঙ্গু নিধনে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। রাজধানীসহ গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গু নিধন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আমরা আশা করব, সরকার ওই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবেন।