কারামুক্ত সন্ত্রাসীদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হোক

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলের পর জেল থেকে একে একে জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। এদের প্রায় সবাই কমপক্ষে ২২ বছর ধরে কারাবন্দি ছিলেন। খুন, চাঁদাবাজি, ভাঙচুর ও দখলবাজির অভিযোগে এদের প্রায় সবারই বিরুদ্ধে ৭ টি থেকে ১৫ টি মামলা রয়েছে। সব কটি মামলায় জামিন পাওয়ার পর একে একে তারা কারাগার থেকে মুক্তি পায়। এ ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগারে থেকেই ঢাকার অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করত, সেখানে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর তা আরও পাকাপোক্ত হবে। অথচ নিরীহ মানুষ ভয়ে থানায় অভিযোগ নিয়েও যাবেন না। এই পরিস্থিতি জননিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ভঙ্গুর অবস্থা। এই সুযোগে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা খুব সহজে বের হয়ে আসছে। বের হওয়ার পর তাদের ওপর নজরদারিও নেই। ঢাকার অপরাধ জগৎ নিয়ে খোঁজখবর রাখেন এমন একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে জামিনে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। কেউ আবার পুরোনো রাজনৈতিক পরিচয় কাজে লাগিয়ে মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আশায় আছেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকের সঙ্গে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের কারও কারও সখ্য হয়েছে। সেই সুযোগও কাজে লাগাতে চাচ্ছেন কেউ কেউ। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেসব সংস্কারের কথা বলছে, তা বাস্তবায়ন করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন আবশ্যক। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পেরেছে বলে মনে হয় না। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধ ডাকাতির চেষ্টা ও সন্ত্রাসী ঘটনার কোনো যোগসূত্র থাকাও অস্বাভাবিক নয়। জামিন পাওয়াকে অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সাফাই গাইতে পারেন। কিন্তু এখানে দেখতে হবে জামিন পাওয়া ব্যক্তি আরও অনেক ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে পড়ে কি না। যাঁরা কারাগারে থেকে অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে, উদ্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে, তারা বাইরে এসে কী করবে, সেটা অনুমান করা কঠিন নয়। পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কারাগার থেকে বের হয়ে আসা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর যে অঙ্গীকার করেছেন, সেটা যাতে নিছক কথার কথা না হয়। তাঁরা যেন ভুলে না যান যে জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব সরকারেরই। ফলে জামিনে বের হয়ে কেউ যেন নতুন করে অপরাধমূলক কাজে জড়াতে না পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারিতে রাখা হোক। শীর্ষ সন্ত্রাসী, গডফাদার বা যেকোনো পরিচয়েই হোক, অপরাধ করলে কাউকে যেন ছাড় দেওয়া না হয়।’