ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করা জরুরি
দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে নিরাপদ খাদ্য এখনও অধরা। খাবার যদি নিরাপদ না হয়, তাহলে তা শরীরের সুস্থতার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে পড়ে। কারণ খাবারে সামান্য গরমিল হলেই সেখান থেকে পেটের পীড়াসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। উৎপাদন ও শিল্পকারখানায় প্রক্রিয়াজাতকরণে ভারী ধাতুর সংমিশ্রণ হয়। মানুষ এখন না খেয়ে যতটা মারা যায়, তার চেয়ে বেশি মারা যায় অনিরাপদ খাবার খেয়ে। কিছু সুবিধাভোগী মুনাফাখোর ব্যবসায়ীর দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে রাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ। যারা বিভিন্নভাবে সুবিধা নিয়ে মানহীন খাবার তুলে দিচ্ছে আমাদের মুখে। আমরা বেঁচে থাকার জন্য খাই, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এইসব নোংরা খাবারের জন্য বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে মানবদেহে। ফলে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে মানুষ। তাই কর্তব্য অবহেলার জন্য রাষ্ট্র কখনও দায় এড়াতে পারে না। সুস্থ-সবল জাতি গঠন এবং সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে হলে নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। শিশুরা যদি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার না খায়, তাহলে তারা ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে না, বরং কোনো রকমে বেঁচে থাকে। এ কারণেই ‘কনভেনশন অন দ্য রাইটস অব দ্য চাইল্ড’ বা শিশুর অধিকার বিষয়ক সনদে ঘোষণা করা হয়েছে, প্রতিটি শিশুরই স্বাস্থ্যকর খাবার ও পুষ্টি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। প্রকৃতি থেকে আহরিত খাদ্যের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না। কিন্তু অধিক মুনাফার আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের বিবেক বিসর্জন দিয়ে খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে, মাছ থেকে শুরু করে ফলমূল, চিপস, জুস সবখানেই ভেজালের ছড়াছড়ি। নিরাপদ খাবার যেন কোথাও নেই। তাই উৎপাদকরা যে খাদ্য খাবেন, সেটিই বাজারে বিক্রি করতে হবে- এ ধরনের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। দেশে যে হারে ক্যান্সার রোগী বাড়ছে, এর জন্য বেশিরভাগ দায় অনিরাপদ খাদ্যের। বিশেষ করে অনিরাপদ খাদ্যের তালিকায় এখন শিশুখাদ্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে খাদ্যপণ্য উৎপাদনের সময় কৃষকরা যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার করেন। কোথায় এবং কী পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করলে শস্য নিরাপদ থাকবে, তা তাঁরা জানেন না। এ কারণে উৎপাদন পর্যায়ে খাদ্য অনিরাপদ হয়ে যায়। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের জন্য বিএফএসএর দক্ষতা বৃদ্ধি ও কার্যকরী জনবল দরকার। সংস্থাটির সঠিক তদারকি, খাদ্যের মান যাচাইয়ের দক্ষতা থাকতে হবে। খাদ্যের উৎপাদন পর্যায়ে নিরাপত্তায় জোর দিতে হবে। সেইসাথে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই। এ পরিস্থিতি উত্তরণে সংস্থাগুলোর সমন্বয় এবং খাদ্য নিরাপত্তা আইনের আলোকে সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার।