বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু; দায় ভার আসলে কার
গত শনিবার সকালে গাজীপুর মহানগরের বোর্ড বাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রায় ৪৬০ জন শিক্ষার্থী বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাসে করে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে যান। এতে বিআরটিসির ডাবল ডেকারের ৬টি ও তিনটি মাইক্রোবাস নিয়ে যান তারা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামীণ আঞ্চলিক সড়ক ধরে রিসোর্টের উদ্দেশে উত্তর পেলাইদ গ্রামের যেতে থাকে। বাসগুলো গ্রামীণ সড়কের উদয়খালী বাজারে পৌঁছালে বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাসটি বাজারের ওপর পল্লি বিদ্যুতের তারে স্পর্শ হয়। ওই বাসে ৬০-৭০ জন ছিলেন। এদের মধ্যে কয়েকজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিন শিক্ষার্থীকে মৃত ঘোষণা করেন। তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলে আনন্দযাত্রা হঠাৎ পরিণত হয় বিষাদে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পিকনিকে আসা পাঁচটি বাস রিসোর্টে চলে যায়; কিন্তু সব শেষের বাসটি সড়কের পাশের বিদ্যুতের লাইনে লেগে গেলে পুরো বাস বিদ্যুতায়িত হয়। এ সময় বাস থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকে। ছাত্ররা চিৎকার শুরু করলে তা শুনে তারা বাসের কাছে যান। এ সময় তিন ছাত্র বাস থেকে নেমে বের হওয়ার চেষ্টা করলেও যেতে না পেরে একজনের মৃত্যু হয়। অন্য দুজনকে শুকনো বাঁশ দিয়ে আঘাত করে শরীর আলাদা করা হয়। স্থানীয়দের দাবি, এই সড়কে কখনো বাস চলাচল করে না। আর সেই সড়কে দ্বিতল বাস নিয়ে পিকনিকে এসেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের তারও অনেকটা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। ফলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাহলে এ দুর্ঘটনায় দায় কার? এখানে প্রথমেই যে প্রশ্নটি আসে, তা হলো প্রথমত সড়কের ওপর দিয়ে আড়াআড়ি থাকা বিদ্যুৎলাইনটি কতটা ঝুঁকিমুক্ত ছিল? দ্বিতীয়ত, অপর একটি বাসকে জায়গা করে দিতে গিয়ে দোতলা বাসটির চালক কেন নিজের বাসকে ঝুঁকিতে ফেললেন? বিদ্যুৎ খাতে মহা উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা শুনেছি বিগত সরকারের আমলে। সেই উন্নয়ন পরিকল্পনার নমুনা কি এই ঝুঁকিপূর্ণ লাইন? এক্ষেত্রে বাসচালকও দায় এড়াতে পারেন না। বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা শুধু পরিবার নয়; রাষ্ট্র ও সমাজের জন্যও অপূরণীয় ক্ষতি। দুর্ঘটনায় যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরা আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।