তরুণদের বিদেশমুখী প্রবণতা কমাতে উদ্যোগ নিন
মেধাবী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছেলেমেয়েরা বিদেশে পাড়ি জমাতে হন্যে হয়ে চেষ্টা করছেন। তরুণদের এই প্রবণতাকে কোনোভাবেই নেতিবাচক বলতে পারি না। তবে এর আগে বলা দরকার, বিদেশে উচ্চশিক্ষায় গমনের ক্ষেত্রে একটা নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। একটা সময় ছিল, কেবল ধনী পরিবার, বড় ব্যবসায়ী, মন্ত্রী-মিনিস্টার আর আমলা-পুত্রকন্যারাই এ সুযোগ পেতেন বা নিতেন। সমাজের ক্ষমতাশালীরা অবশ্য সব সময় নিজের সন্তানসন্ততিদের বিদেশে নিরাপদে রাখার নীতিতে বিশ্বাসী। এখন মধ্যবিত্ত তো বটেই, সাধারণ গরিব ঘরের, এমনকি কৃষক পরিবারের সন্তানেরাও উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছেন। ওয়েবসাইটে ঢুকে আবেদন করে, বৃত্তি অর্জন করে, প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে, ধারকর্জ করে টিকিট কিনে, ব্যাগপত্র গুছিয়ে উড়োজাহাজে উঠে বসছেন। দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে, এ তথ্য নতুন নয়। তবে তা কী হারে বাড়ছে, এর একটি ধারণা পাওয়া যায় এদেশে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিলের এক গবেষণায়। ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, দেশের ৫৫ শতাংশ তরুণ পড়াশোনা ও কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যেতে আগ্রহী। উচ্চ বেকারত্বই যে এর কারণ, তারও ইঙ্গিত পাওয়া যায় এ গবেষণায়। এতে দেখা যায়, দেশের ৪২ শতাংশ তরুণ বেকারত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের মতে, বেকারত্বের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগে বৈষম্য এবং পারিবারিক জীবন ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে না পারা। মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য উন্নত দেশগুলোতে যাবে, পড়ালেখা শেষে ফিরে এসে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখবে, এটাই স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কিন্তু তারা যদি আর দেশে ফিরে না এসে বিদেশেই থেকে যায় তাহলে সেটা হয় ‘মেধা পাচার’। দেশের তরুণ শ্রেণীর এই সমস্যা নতুন নয়, দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। প্রত্যেক সরকারই এসব সমাধানে অনেক আশ্বাস ও উদ্যোগের কথা বলেছে। সর্বশেষ, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তা কেবল কথার ফুলঝুরি হয়েই ছিল। এতে তরুণ শ্রেণি হতাশ হয়ে ‘দেশে কিছু হবে না’ বলে দেশ ছাড়ার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, বৈধ-অবৈধ পথে দেশ ছেড়েছে। বন-জঙ্গলের দুর্গম পথ ও ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে জীবন দিয়েছে। তাদের এই বিদেশগামী প্রবণতার মূল কারণ হচ্ছে, দেশে তাদের কর্মসংস্থান বা কোনো কিছু করে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ না থাকা। দিনি দিন কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে। ফলে বিদেশের কঠিন পরিবেশের মধ্যেও স্বাবলম্বী হয়ে জীবন উন্নত করার প্রত্যাশা নিয়ে সেখানে যাওয়া শ্রেয় মনে করছে। জরুরিভিত্তিতে অন্তর্র্বতী সরকারকে যে কাজটি করা উচিত তা হচ্ছে, দেশের বেকারত্ব নিরসনে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া।