সম্পাদকীয়

বছরের শুরুতে পাঠ্য বই দেয়া নিয়ে শঙ্কা

নতুন শিক্ষাবর্ষ সামনে রেখে আগের বছরগুলোতে এই সময়ে রাজধানীর মাতুয়াইলের ছাপাখানাগুলোতে থাকে ব্যস্ততা। তবে এবারের চিত্র পুরোই উল্টো। শুনশান নীরবতা সব ছাপাখানায়। এখনো বন্ধ পাঠ্যপুস্তক ছাপার মেশিন, নেই মুদ্রণকর্মীদের আনাগোনাও। মুদ্রণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পহেলা জানুয়ারির আগে সব বই ছাপানো সম্ভব নয়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বলছে, মুদ্রণকারীরা আন্তরিক হলে বছরের শুরুতেই নতুন বই পাবে শিক্ষার্থীরা। নতুন কারিকুলাম বাতিল করে, ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। আগের এসব পাঠ্যবইয়ে প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে সংশোধন-পরিমার্জন হবে বিষয়স্তুরও। সেই কার্যক্রম এখনো শেষ করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড- এনসিটিবি। তার ওপর মাধ্যমিকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ আবার চালু হওয়ায় বাড়ছে বইয়ের সংখ্যাও। প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তক ছাপার কার্যাদেশ দেয়া হলেও ছাপা শুরু হতে বেশ কিছু ধাপ বাকি। প্রায় দুই মাস পর শুরু হবে নতুন শিক্ষাবর্ষ। প্রতিবছরের শুরুতেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীরা হাতে নতুন পাঠ্যপুস্তক পেয়ে থাকে। নতুন বই পেয়ে তারা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়ে। কিন্তু এ বছর শুরুই হয়নি পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ। এমনকি শেষ হয়নি সব শ্রেণির বইয়ের পা-ুলিপি তৈরি ও দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া। অথচ দরপত্র অনুযায়ী, মুদ্রকদের এসব বই ছাপার জন্য ৫০ দিন সময় দিতে হয়। উল্লেখ্য, এবার স্কুল-মাদ্রাসা-কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই কোটি শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে ৪০ কোটি বই ছাপানোর কথা রয়েছে। এসব বইয়ের সঙ্গে জুলাই-আগস্টের যে আন্দোলন, এর গ্রাফিতি যুক্ত করার কথাও রয়েছে। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের অবদানকেও নতুনভাবে উপস্থাপন করা হবে। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা শ্রমসাধ্য তো বটেই, প্রয়োজনীয় সময়ও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। ফলে বছরের শুরুতেই ছাত্রছাত্রীদের হাতে নতুন পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুরোনো শিক্ষাক্রমের বই হলেও বিষয়বস্তুতে কিছু পরিবর্তন হবে। পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে ইতিমধ্যে পাঠ্যবই আছে। প্রথামাফিক বছরের শুরুতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের বই তুলে দিতে না পারলে তা হবে দুঃখজনক। অবশ্য জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন, সেই সময়টায় দেশের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে কাজের গতি ছিল ধীর। তাছাড়া এবারের বইয়ে কিছু পুরোনো বিষয় বাদ দিয়ে নতুন কিছু যুক্ত করা হবে বলে বইয়ের পা-ুলিপি তৈরি করাটাও সময়সাপেক্ষে ব্যাপার যেহেতু, তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেভাবে দোষ দেওয়া যায় না। তাড়াহুড়ো করে বই ছাপাতে গিয়ে বইয়ের মান যেন ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আবার পুরো প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ঢুকে গেলে মানসম্পন্ন বই প্রকাশ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এনসিটিবি কর্তৃপক্ষকে সব বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিতে হবে অবশ্যই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button