সম্পাদকীয়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং বন্ধ করতে হবে

র‌্যাগিং, বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রচলিত এমন একটি ‘পরিচিতি বা দীক্ষা পর্ব’, যার মূল লক্ষ্যই থাকে প্রবীণ শিক্ষার্থী কর্তৃক নবীন শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা। প্রথম পরিচয়েই সিনিয়ররা তাদের জুনিয়রদের বুঝিয়ে দিতে চায়, তারা কতটা খারাপ ও প্রভাবশালী। গণমাধ্যমে দেখতে পাই, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক টর্চার সেল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে এ টর্চার সেলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়। কিন্তু এ টর্চার সেলে যে নির্যাতন হয়, তার বিচার তেমন হয় না বললেই চলে। নামমাত্র বিচার হয় কিছু ঘটনার। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, যা নিয়ে নতুন শিক্ষার্থীরা খুবই আতঙ্কে রয়েছে। এটি আমাদের সমাজের জন্য বিব্রতকর। র‌্যাগিং নিছক আনন্দ বা পরিহাস নয়। এটি মূলত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের এমন এক ঘৃণ্য রূপ, যা ভুক্তভোগীদের আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্ব বিকাশকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করে। বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ কিংবা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিংয়ের নামে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। কখনো তা শারীরিক নিপীড়ন, কখনো মানসিকভাবে হয়রানি কিংবা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না; বরং কিছু ক্ষেত্রে এর মাশুল দিতে হয়েছে জীবন দিয়ে। বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যাকা- এই বাস্তবতারই করুণ চিত্র। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এমন সংস্কৃতির পেছনে মূলত প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, র‌্যাগিংয়ে জড়িত শিক্ষার্থীরা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট। ক্ষমতার জোরে তাঁরা কোনো শাস্তি ছাড়াই পার পেয়ে যান। ২০২০ সালে উচ্চ আদালত র‌্যাগিং প্রতিরোধে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই এই নির্দেশ কার্যকর করেনি। প্রচলিত আইনেও র‌্যাগিং নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান নেই। এটি অপরাধীদের আরও উৎসাহিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে কেন শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হবে? কোথাও কোথাও এমনকি শিক্ষকরাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এসব কোনোটাই সভ্য দেশে কাম্য নয়। যদি কেউ কোনো অপরাধ করে থাকে, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রয়েছে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু আমরা কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছি? বিশ্ববিদ্যালয় হবে মুক্তচিন্তার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এসব টর্চার সেল বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় নবীন শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে থাকবে। এমন কী অনেক বিষয়ে শিক্ষকরাও আতঙ্কে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button