সম্পাদকীয়

অক্সিজেন প্লান্ট: স্বাস্থ্যখাতে যুগান্তকারী উদ্যোগ

করোনাকালে অক্সিজেনের অভাব বাংলাদেশকে যে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল, তা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বড় দুর্বলতা প্রকাশ করে দিয়েছিল। অক্সিজেনের মতো জরুরি উপকরণে আমদানিনির্ভরতা তখন চিকিৎসা ব্যবস্থাকে অচল করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। সে অভিজ্ঞতার পর সরকার দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাকৃতিকভাবে পানি থেকে অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্লান্ট স্থাপনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। নারায়ণগঞ্জের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে ইতিমধ্যেই একটি আধুনিক অক্সিজেন প্লান্ট নির্মিত হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেই সাত দিনের মধ্যে এটি উৎপাদনে যাবে। এর ফলে শুধু আমদানিনির্ভরতা কমবে না, বরং হাসপাতালের বছরে প্রায় ৬০ লাখ টাকার সাশ্রয় হবে। উৎপাদিত অক্সিজেন সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে রোগীদের ওয়ার্ডে পৌঁছে যাবে-যা জরুরি সেবা প্রদানে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। জাতিসংঘ প্রকল্প পরিষেবা অফিস (ইউএনওপিএস)-এর সহযোগিতায় এবং গ্লোবাল ফান্ড ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফর বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে দেশজুড়ে ২৯টি অক্সিজেন প্লান্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি চালু হলেও বাকিগুলো এখনো বিদ্যুৎ সংযোগের অপেক্ষায়। অথচ এসব প্লান্ট চালু হলে প্রতিমিনিটে ৯৫০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন উৎপাদন সম্ভব হবে। খরচও হবে প্রায় অতি সামান্য-বর্তমান ব্যয়ের মাত্র এক শতাংশ। এতে যেমন ব্যয় সাশ্রয় হবে, তেমনি চিকিৎসা সেবার মানও বৃদ্ধি পাবে। তবে প্রশ্ন হলো, বিদ্যুৎ সংযোগের মতো মৌলিক একটি বিষয়কে ঘিরে কেন এত বিলম্ব? স্বাস্থ্যসেবায় জীবনরক্ষাকারী উপাদান অক্সিজেনের ক্ষেত্রে কোনো দেরি বা জটিলতার সুযোগ নেই। এখনই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে এসে বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিটি প্লান্টের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং মান নিয়ন্ত্রণেও নজর দেওয়া জরুরি। অক্সিজেন প্লান্ট কেবল একটি প্রযুক্তিগত প্রকল্প নয়; এটি স্বাস্থ্যখাতকে টেকসই ও স্বনির্ভর করার হাতিয়ার। মহামারির অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়েছে-নিজস্ব সক্ষমতা গড়ে তোলা ছাড়া সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়। তাই শুধু খানপুর নয়, দেশের প্রতিটি হাসপাতালে কার্যকরভাবে অক্সিজেন প্লান্ট চালু করাই হবে স্বাস্থ্যখাতের বড় অর্জন।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button