জাতীয় সংবাদ

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

এফএনএস : আজ মঙ্গলবার মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের তৃতীয় দিন। দীর্ঘ দু’যুগের শোষিত-বঞ্চিত মানুষগুলোর একটাই আকুতি ছিল শোষণ-বঞ্চনার জাল ছিন্ন করা। এ দিন থেকেই মূলত: স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই যুদ্ধ ক্রমেই সম্মুখ যুদ্ধের আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
বিজয়ের এ মাসেই রক্তøাত জনযুদ্ধের মাধ্যমে সাতান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা যে কোনো ব্যক্তির, জাতির পরম আকাক্সক্ষার বিষয় ও গর্বের ধন। স্বাধীন না হলে একটি জাতির স্বাতর্ন্ত্য ও কৃষ্টি বিপন্ন হয়ে পড়ে। এর ফলে পরাধীন জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিকভাবে নিপীড়িত, অর্থনৈতিকভাবে শোষিত এবং সাংস্কৃতিকভাবে অপমাণিত হতে হয়। যেমনটা হতে হয়েছিল পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা এ ভূখন্ড ও এর নাগরিকদের।
সাপ্তাহিক বাংলাদেশ পত্রিকা ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিশেষ সংখ্যায় লিখেছে ঃ ৩রা ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ভারতের ’লবাহিনী আমাদের মুক্তিবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছে এবং ইতোমধ্যে বিবির বাজার ও কমলপুরসহ বহু শহর মুক্ত করে নিয়েছে। কমলপুরে ১৬০ জন বেলুচ সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছে। আখাউড়া এখন সম্পূর্ণ অবরোধ এবং পশ্চিম রণাঙ্গনে আমাদের মুক্তিবাহিনী স্রোতের মতো এগিয়ে আসছে। তারা এখন যশোর ক্যান্টনমেন্ট সম্পূর্ণ অবরোধ করে রেখেছে এবং আগামী ২/১ দিনের মধ্যে যশোর ক্যান্টনমেন্ট আমাদের দখলে আসবে।’ আর প্রফেসর মযহারুল ইসলাম তার ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, পাকিস্তান ৩ ডিসেম্বর ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে ভারত কঠোরভাবে তার মোকাবিলা করে।
কিন্তু স্বাধীনতা অর্জন ও জাতীয় জীবনে এর প্রভাব নিয়ে এখন নানা রকম অংক কষা হয়। রাজনীতিক-অরাজনীতিক, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, আমলা-কৃষক অনেকেই হতাশার স্বরে বলে থাকেন, স্বাধীনতার এতদিনে আমরা কী পেলাম! প্রকৃতপক্ষেই এ দেশের স্বাধীনতার বয়স একচল্লিশ বছর পার হতে চললেও দেশ বিরোধী একটি মহলের জন্য আমাদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, মানুষের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক স্বাতর্ন্ত্য তেমনভাবে রক্ষিত হচ্ছে না। সার্বভৌমত্ব, গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোও আজ নানা কারণে বিপন্ন প্রায়। সামগ্রিক বিবেচনায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও যথাযথ স্বপ্ন পূরণ হয়নি। প্রতিবন্ধকতার বেড়াজালে বন্দী এ দেশের মানুষ। রক্ত, সম্ভ্রম, সর্বোপরি জীবনের দামে অর্জিত স্বাধীনতা আমরা কতটুকু বিপদমুক্ত করতে পেরেছি তা একটিবার হলেও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। কারণ আজো দেশের অভ্যন্তর ও বাইরে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রের হাত থেকে প্রাণপ্রিয় দেশকে রক্ষা করতে দেশপ্রেমিক জনতাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যথায় স্বাধীনতার সৈনিকদের তাজা রক্তস্রোত ও দুঃখিনী মায়ের অশ্রুধারা ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তে হারিয়ে যেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button