জাতীয় সংবাদ

হাসিনাকে ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত ভারত শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য হবে : মাহমুদুর রহমান

প্রবাহ রিপোর্ট : ভারত যতদিন শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে না দেবে ততদিন বাংলাদেশের মানুষের কাছে শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য হবে বলে মন্তব্য করেছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ‘ফেলানি হত্যা থেকে ডামি ইলেকশন: কেঁড়ে নেয়া স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনা সভাটির আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আলোচনা সভায় মাহমুদুর রহমান বলেন, যতদিন ভারত শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে না দেবে, ততদিন ভারত আমাদের কাছে শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য হবে। তারা শুধু এত বড় অপরাধীকে আশ্রয়ই দেয়নি, সেখানে বসে হাসিনাকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নেতৃত্ব দিতে দিচ্ছে। কাজেই এর থেকে বড় শত্রুতামূলক কর্মকা- আর হতে পারে না। কাজেই ভারত যদি শত্রু হতে না চায়, তাহলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিক, আমরাও তাদের সঙ্গে একটি ভারসাম্যমূলক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাব। তিনি বলেন, এই প্রথম বাংলাদেশে এমন একটি বিপ্লব হয়েছে, যে বিপ্লবে আমরা বিদেশিদের কোনো সাহায্য নিইনি। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম ভারতের সহায়তায়, যে কারণে গত ৫৪ বছর ধরে তারা বাংলাদেশের ওপর মাতব্বরি করার চেষ্টা করেছে। এবার তরুণরা যে বিপ্লব করেছে, সেটা কোনো বিদেশি শক্তির দিকে তাকিয়ে করেনি। তারা ভারত, আমেরিকা, চীনের দিকে তাকায়নি। তারা নিজেদের শক্তি এবং আল্লাহর রহমত এ দুটির ওপর ভরসা করে লড়াই করেছে, জীবন দিয়েছে এবং শেখ হাসিনাকে পরাজিত করেছে, তাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনা এবারই প্রথম পালায়নি, এটা শেখ হাসিনার তৃতীয়বারের পলায়ন। প্রথমবার ১৯৭৫ সালে সেনা বিদ্রোহের ফলে যখন তার পিতা নিহত হয়েছিল, বাকশালের পতন হয়েছিল, তখন সে (শেখ হাসিনা) বিদেশে অবস্থান করলেও সেখান থেকে পালিয়ে ৬ বছর দিল্লীর আশ্রয়ে ছিল। দ্বিতীয়বার ১/১১’র পরে যখন সেনাবাহিনী থেকে দুই নেত্রীকে পালিয়ে যেতে বলা হলো, তখন শেখ হাসিনা একদিনও দেরি না করে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। এবার হলো তার তৃতীয় পলায়ন। কাজেই শেখ হাসিনা যে বলে না, হাসিনা পালায় না, হাসিনা পালানোর জন্যই জন্মেছে। ও বারে বারে পালায়। শুধু সে নয়, তার পিতাও পালিয়েছে। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিব পাকিস্তানি আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করে নিরাপদে ছিল। তিনি আরও বলেন, এবার শেখ হাসিনাকে পালিয়ে বাঁচতে দেওয়া যাবে না। তাকে ফিরিয়ে বিচার করতে হবে। আমি শাহবাগীদের মতো বলবো না, কারও ফাঁসি চাই। এটি ফ্যাসিবাদী বয়ান। আমি বলবো বিচার চাই। বাংলাদেশের আইনে যে বিচার আছে, সেই বিচার শেখ হাসিনার হতে হবে। কাজেই ভারত যদি আমাদের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক চায়, তাহলে অবশ্যই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিতে হবে। যাতে আমরা শেখ হাসিনার বিচার করতে পারি। ছাত্রদের মধ্যে বিভাজন যেন না হয়, সেজন্য চিন্তা, আদর্শের ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানান সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। সভাপতির বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, লড়াই এখনো শেষ হয়নি। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং বাংলাদেশের জনগণের নিজস্ব ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত রাখতে সব সময় সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি প্রগতিশীল বনাম মৌলবাদী রাজনীতি পুনরায় বাংলাদেশে নিয়ে আসার যে ষড়যন্ত্র চলছে, সেটাকে অবশ্যই নস্যাৎ করে দিতে হবে। আমাদের মধ্যে বিভিন্ন মতৈক্য থাকবে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং গ্রুপ তাদের রাজনীতি করবেন। কিন্তু আমরা আশা করবো, সামনের দিনে বাংলাদেশের সকলের রাজনীতি হবে জনগণপন্থী, বাংলাদেশ পন্থী। আমাদের মধ্যে যত মতপার্থক্যই থাকুক না কেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমাদের মধ্যে ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য বজায় থাকবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ সারোয়ার তুষার।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button